পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট প্লাবিত : ভেসে গেলো `জলপরি’!

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি, দেশেরে বৃহত্তম দু‘টি কোয়ারী বন্ধ, লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার

Goainghatসুরমা টাইমস ডেস্কঃ পাহাড়ী ঢল আর অবিরাম বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট। অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্ধি রয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ সর্ম্পন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির আউশ ইরি ও সব্জি চাষ‘র ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে। দেশেরে বৃহত্তম দু‘টি পাথর কোয়ারীসহ সকল প্রকার কার্যক্রম বন্দ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে শ্রমিক ও অসহায় মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছে বিপাকে। এছাড়া জাফলং চা-বাগানে চা-শ্রমিকদের বসত বাড়ীসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পিয়াইন ও সারী নদী‘র ঢলে উপজেলার সর্বত্র প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর বহনকারী যানবাহনের মালিক গন‘র ব্যাপক ক্ষতি দেখো দিয়েছে। এছাড়া তাছাড়া বাড়ীর পুকুর এবং ফিশারী গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক কোঠি টাকার মাছ বাসিয়ে গেছে। পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার পুর্ব জাফলং ইউনিয়ন, আলীরগাঁও ইউনিয়ন, রুস্তমপুর ইউনিয়ন, ডৌবাড়ী ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন, তোয়াকুল ইউনিয়ন, নন্দীরগাও ইউনিয়ন ও পশ্চিম জাফলংসহ উপজেলার সর্বত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানি বন্ধি রয়েছেন। তাছাড়া উপজেলার সদরের সাথে যোগাযোগের দু‘টি রাস্ত্ াসারী-jolporiগোয়াইন ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সড়কের অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে চুতুরদিকে পানি থাকায় এবং অবিরাম বৃষ্টির কারনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্টানে যেতে পারেনি। অফিস পাড়ায় সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও সাধারন মানুষ এর উপস্থিতি খুবই নগন্য। বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরির্দশকালে দেখা যায় অধিকাংশ গ্রামের চতুর পাশে পানি রয়েছে। তাই বাড়ী থেকে লোকজন বাহির হতে পারেনি।
সারী-গোয়াইনঘাট-সড়কের লাফনাউট, কমপুর, বেকরা, বার্কীপুরসহ বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সালুঠিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের তুকুইর, কাটাখাল, দামারিসহ বিভিন্ন স্থান পানি উটতে শুরু করেছে। এতে করে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। অত্যান্ত কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে শ্রমিকসহ উপজেলাবাসী। জাফলং পিয়াইন নদীতে ডাউকী নদীর ঢলে কোয়ারী বন্দ রয়েছে। হাজার হাজার নৌকা সারী বদ্ধভাবে নদীর তীরবর্তী এলাকায় শ্রমিকরা বেঁেধ রেখেছেন। এরির্পোট লেখা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে আরও পানি বৃদ্ধি হলে বড় ক্ষতি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সালাহউদ্দিন জানান সর্বক্ষনিক বন্যার খোজ খবর নিচ্ছি এবং ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিঠির সভা করে বন্যা কবলিত এলকার খবর নেওয়ার জন্য দায়িত্ব বন্ঠন করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ানম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী জানান বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সার্বক্ষনিক খোজ খবর রাখছি। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখছি।
এদিকে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছানাকান্দি। সেখানকার প্রকৃতির গাঢ় সবুজ আর স্বচ্ছ জলরাশি নিবিড়ভাবে কাছে টানে পর্যটকদের। এই স্থানটিতে যেতে ভ্রমণ পিপাসু আর পর্যটকদের চোখে পড়ে ‘জলপরি’ নামে পানিতে ভাসমান একটি রেস্টুরেন্ট। যা ড্রামের ওপর নির্মিত। এর খাবারে মান ও সহনীয় দামের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয় সবার কাছে। সেই জলপরিকে মঙ্গলবার দিনগত গভীরাতে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো পাহাড়ি ঢল।
স্থানীয়রা জানান, দু’দিন ধরে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিতে উজানের পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় ভাসমান ‘জলপরি’ রেস্টুরেন্ট। এতে স্থানীয়দের মধ্যে হৈচৈ পড়ে যায়।
এই পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পটের পাশের এলাকার বাসিন্দা পল্লি চিকিৎসক হারুনুর রশিদ বলেন, পিকনিক স্পট সংলগ্ন এলাকায় পানিতে ড্রামের ওপর নির্মিত এই ‘জলপরি’ রেস্টুরেন্ট এখানে আসা পর্যটকদের খুব বেশি নজর কাড়ে। ভাসমান এই রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের খানাপিনা থেকে কাপড় পরিবর্তনের সুবিধা রয়েছেও বলে জানান তিনি।
‘জলপরি’ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া কয়েক কিলোমিটার দূর বাদেপাশা এলাকায় জলপরির খোঁজ পাওয়া গেছে। রাতে ওই রেস্টুরেন্টে দু’জন কর্মচারী ঘুমিয়ে ছিলেন। তবে তাদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।