কিবরিয়া হত্যা মামলার এই আরিফ কি সেই আরিফ? (ভিডিও)

Meyor-Arifসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া তৃতীয় দফার সম্পূরক চার্জশিটেও ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি সিলেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন নেছা পারুলের দাখিল করা গত ১০ ডিসেম্বরের চার্জশিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ৩৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
চার্জশিটে ঘটনা বর্ণনার প্রতিটি পর্যায়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা যথাযথভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মূল যে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ওই মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে, সেটি হলো- হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের একটি জবানবন্দি।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া মুফতি হান্নানের ওই জবানবন্দিতে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নাম আসাতেই মূলত হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জিকে গৌছ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সিলেটের বর্তমান মেয়র ও তৎকালীন পৌর কমিশনার আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
অথচ চার্জশিটেই মুফতি হান্নানের বক্তব্যের যে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে- ‘আলোচ্য ঘটনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সংগ্রহ সরবরাহকারীকে মদদদানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জ্ঞাতসারে আশ্রয় এবং প্রশয়দাতার ভূমিকা পালন করেছেন বলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
এছাড়াও মতিঝিল থানার মামলা নং- ৯৭(০৮)২০০৪ সংক্রান্তে হাফেজ মুফতি আব্দুল হান্নান গত ০৭/০৪/২০১১ ইং তারিখের প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন যে, ২০০৩ সালের শেষের দিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বেইশি রোডস্থ সরকারি বাসায় অপরাপর আসামিদের সাথে জিকে গৌছ এবং আরিফুল ইসলাম আরিফ (ওয়ার্ড কমিশার)কে প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সিলেটে পরিকল্পনা মতো কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সহায়তায় অত্র হামলার ঘটনা ঘটায়।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই তৃতীয় দফার চার্জশিটে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মুফতি হান্নানের যে বক্তব্যের সূত্র ধরে মেয়র আরিফকে আসামি করা হয়েছে, সেই মুফতি হান্নানের বক্তব্যে আরিফুল ইসলাম আরিফের নাম থাকলেই এই আরিফই যে সিলেটের তৎকালীন কমিশনার আরিফুল হক চৌধুরী (বর্তমান মেয়র) তা সুনিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান হয় না।
এর স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০০৩ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে সুষ্পষ্টভাবে একজন আরিফের নাম উল্লেখ করেছেন। ওই আরিফ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ২৪নং ওয়ার্ড কমিশনার।
মুফতি হান্নানের দেয়া ওই বক্তব্য পরবর্তীতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার বিষয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্রেও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, যা এখনো ইন্টারনেটে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে। সেখানে মুফতি হান্নান সুষ্পষ্টভাবে জিকে গৌছ ও কমিশনার আরিফের নাম উচ্চারণ করেছেন।
জানা গেছে, মুফতি হান্নানের ওই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম আরিফকে আসামি করা হয় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায়। ওই মামলাতে সাবেক ওই কাউন্সিলর বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়া আরিফ যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তা সুনিশ্চিত হওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আসলে কিবরিয়া হত্যায় কোনো আরিফ জড়িত তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন এই আরিফ কি সেই আরিফ?
প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার তৃতীয় দফা সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল গত ১২ নভেম্বর। ওই চার্জশিটে কিবরিয়া হত্যা মামলায় নতুনভাবে আসামি করা হয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গৌছ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। ওই চার্জশিটের সর্বত্র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম আরিফুল ইসলাম আরিফ উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত মুফতি হান্নানের বক্তব্যের অংশের এই নাম হাতে লিখে আরিফুল হক চৌধুরী করা হয়। চার্জশিটে এই অসঙ্গতি থাকায় পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা পারুল সংশোধনের জন্য চার্জশিট ফেরত আনেন এবং সংশোধন করে গত ১০ ডিসেম্বর তা পুনরায় আদালতে দাখিল করেন।
ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের আদালত এই সম্পূরক চার্জশিট আদালত গ্রহণ করে নতুনভাবে অভিযুক্ত হওয়া সিলেট সিটি মেয়রসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
চার্জশিটের এই অসঙ্গতির বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি সিলেট জোনের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল বাংলামেইলকে বলেন, ‘চার্জশিটে আমি যা উল্লেখ করেছি, তা যথাযথভাবেই করেছি। তদন্তে যাদের ভূমিকা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়েছি, তাদের নামই সুনির্দিষ্টভাবে দিয়েছি। নামে ভুলের বিষয়টি তুচ্ছ বিষয়। তাছাড়া আরিফ নামে দু ব্যক্তির একজন সিলেটে ও আরেক জন ঢাকায় রয়েছেন, তাও আমি জানি।’
তিনি বলেন, ‘মুফতি হান্নান তো সিলেটের আরিফকে চেনে না। তাই তার নাম হয়তো যথাযথভাবে বলতে পারেনি। এখনো বিচার তো শুরু হয়নি। বিচার শুরু হলে তার প্রমাণ হবে।’

https://www.youtube.com/watch?v=uzriqVTwQQE