এ রায় জুলুম ও অবিচারের আরেকটি নজির : মাহমুদুর রহমান
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সম্পদের হিসাব না দেয়ার অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় দৈনিক আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের তিন বছরেরর কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমনার আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মাহমুদুর রহমান বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে জুলুম ও অবিচারের আরেকটি নজির স্থাপিত হলো। অন্যায়, আধিপত্যবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে লড়াই অব্যাহত থাকবে। যেকোন অবস্থা মোকাবেলা, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার লড়াই অব্যাহত থাকবে। করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া অনাদায়ে আরো একমাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। এটিই আদালতের সর্বোচ্চ সাজা। বিচারকালে মামলার আইও স্বীকার করেছেন দুদক এখনও মাহমুদুর রহমানের অবৈধ সম্পদের কোন হদিস পাননি। বিচারক তার রায়ে বলেছেন, নোটিশের জবাব না দেয়ার কারনেই তার এই সাজা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী বলেছেন, অবৈধ সম্পদের মামলা এটি নয়, এটি দুদকের নোটিশের জবাব না দেয়ার মামলা। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেছেন,প্রাথমিকভাবেও মাহমুদুর রহমানের কোন অবৈধ সম্পদের হদিস না পেয়ে সম্পদের হিসাব চেয়ে কোন নোটিশই দুদক দিতে পারে না। কিন্তু দুদক সেটা করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেমূলকভাবে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমারা আশা করেছিলেন এ মামলার আইও যিনি তার সাজা হবে। কিন্তু সেটা না করে মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মাহমুদুর রহমান দুই দফায় তিন বছর একমাস ছয় দিন কারাভোগ করেছেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন তার কারাভোগ প্রাপ্ত সাজা থেকে বাদ যাবে। এদিকে, রায় ঘোষণার পর মাহমুদুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে জুলুম ও অবিচারের আরেকটি নজির স্থাপিত হলো। অন্যায়, আধিপত্যবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে লড়াই অব্যাহত থাকবে। যেকোন অবস্থা মোকাবেলা, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার লড়াই অব্যাহত থাকবে। মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আদালতকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে সরকার তাকে এ সাজা দিয়েছে। এর কিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনি আপিল করবেন। তিনি বলেছেন,ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য তার লড়াই অব্যাহত থাকবে। কারাদণ্ড কেন প্রয়োজনে তিনি এ জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ৫ বছরে দুইবার দণ্ডিত হলেন এক সময় বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আমার দেশ পত্রিকায় সরকারের দুর্নীতির খবর প্রচারের পর থেকেই রোষানলে পড়েন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আদালতে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান, তাজুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন নিয়ন এবং রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাডভোকেট কাজল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, নগর সম্পাদক এম আবদুল্লাহ,কবি হাসান হাফিজ, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার হাছিনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৩ মার্চ সম্পদের বিবরণ দাখিলের জন্য মাহমুদুর রহমানকে নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় একই বছরের ১৩ জুন গুলশান থানায় দুদকের উপ-পরিচালক নূর আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় একই বছরের ১৫ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। রায় ঘোষণার পর মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণ আমি সরকারপ্রধানের পুত্র ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। জজ সাহেব সরকারপ্রধানকে খুশি করতে আইনবহির্ভূত এ রায় ঘোষণা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ মামলায় বাদী কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। এরপরও বেআইনিভাবে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এক স্কাইপ কেলেঙ্কারির জন্য আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই কাজ জনকণ্ঠ ও একাত্তর টেলিভিশন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। তাহলে দেশে কোথায় আইনের শাসন!’ কোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে জুলুম ও অবিচারের আরেকটি নজির স্থাপিত হলো। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (জহিরুল হুদা) সাক্ষ্য দিতে এসে পালিয়ে গেছেন। তিনি সাক্ষ্য দিলে সরকারের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসত। ফ্যাসিবাদী এ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। এ লড়াই থামবে না।’ তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মাহমুদুর রহমানের কোন অবৈধ সম্পদের হদিস দুদক পায়নি। আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে মামলার আইও নুর আহম্মেদ স্পষ্টভাবে এটা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন ২০১০ সাল থেকে এ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এতাদিন অনুসন্ধান করেও তারা কোন অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাননি। তবে এখনও তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, ‘বিচারক সংবিধান এবং দুদক আইন লঙ্ঘন করে এ রায় ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশে এ মামলা ও রায় হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। সেখানে এ রায় টিকবে না।’ এদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন,অবৈধ সম্পদের মামলা এটি নয়। বৈধ -অবৈধ যে সম্পদেই থাকুক সেটার হিসাব দেয়ার জন্য দুদক নোটিশ দিয়েছিল। সে নোটিশের জবাব না দিয়ে মাহমুদুর রহমান আইন লংঘন করেছেন। এ জন্য তাকে সর্বচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন,‘আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মাহমুদুর রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।’ দ্বিতীয়বার দণ্ডিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০১০ সালের জুন মাসে সরকার আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় এবং মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আদালত অবমাননার একটি অভিযোগে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তখন প্রায় ১০ মাস কারাভোগ শেষে তিনি মুক্তি পান। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তখন আমার দেশ আবার পুনঃপ্রকাশিত হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আবার গ্রেপ্তার করা হয় মাহমুদুর রহমানকে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারির কথোপকথন প্রকাশ করে আমার দেশ। দ্বিতীয় দফায় আবার আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।এরপর থেকে মাহমুদুর রহমান কারাগারেই আছেন। আর আলোর মুখ দেখেনি দ্বিতীয় সর্বাধিক সংখ্যার আমার দেশ।