আলী ‘ছাত্রলীগের কেউ নয়’! তাহলে আলী কার ?
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ দায় এড়ানোর রাজনীতিই চলমান বাংলাদেশে। অপরাধ-অপকর্ম যে দলের নেতা বা কর্মীই করুক না কেন, সেই দল তড়িৎগতিতে অপরাধ-অপকর্মে নিজেদের নেতা বা কর্মী জড়িত নয় বলে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে বেড়ান। সেই ‘ধারাবাহিকতা’র আরেক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ছাত্রলীগ! শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী বন্দুকযুদ্ধে গত বছরের ২০ নভেম্বর নিহত হওয়া সুমন দাসকে অস্বীকারের পর এবার মদন মোহন কলেজে খুন হওয়া আবদুল আলীকে ‘ছাত্রলীগের কেউ নয়’ বলে অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ! সেবার ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ সুমন দাসকে নিজেদের ‘কেউ নয়’ বলে অস্বীকার করেন! তার সাথে একই সুরে গলা মিলিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতারাও বলেছিলেন, ‘সুমন ছাত্রলীগের কেউ নয়’! এবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন অস্বীকার করলেন আবদুল আলীকে! তার সাথে প্রায় একই সুরে গলা মেলালেন জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা! সুমন দাস আপাদমস্তক একজন মুজিব সৈনিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন সুমন। সুমনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনই স্বাক্ষ্য দিয়েছিল, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পর জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে মিছিল কিংবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সংবর্ধনা, সবখানেই পদচারণা ছিল সুমনের। কিন্তু তবু সুমনকে অস্বীকার করেছিল ছাত্রলীগ। এবার সেই সুমনের মতোই আবদুল আলীকে ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে দায় এড়াতে চাইছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বুধবার বিকেলে এ ফোন দিয়ে আবদুল আলী ছাত্রলীগের কেউ নয়, এমন দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে মদন মোহন কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। ছাত্রলীগের কোনো কার্যক্রম মদন মোহনে নেই। আজ সেখানে কোনো মিছিল বা সমাবেশ ছিল না। সুতরাং আজকে (বুধবার) যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ বুধবার যিনি মারা গেছেন অর্থাৎ, আবদুল আলী কি ছাত্রলীগের কেউ নন? এমন প্রশ্ন তাকে করে শেষ করার আগেই জাকির তড়িৎগতিতে বলেন, ‘যে মারা গেছে, সে ছাত্রলীগের কিছু না।’! কমিটি না থাকলে কেউ ছাত্রলীগ করতে পারে না? ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হতে পারে না? কিংবা মিছিল-সমাবেশ থাকলেই শুধু ছাত্রলীগ বলে গণ্য হবে, অন্যথায় হবে না? এমন প্রশ্নই ওঠছে ক্ষুব্দ সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে। দায় এড়ানোর নির্মম মত্ততায় লিপ্ত নেতারা কি একবার খুন হওয়া আবদুল আলীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুঁ মেরে আসবেন? দেখবেন কি ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে আলীর অগ্রভাগে থাকার স্থির চিত্র?
ফেসবুকে খুব বেশি কার্যকর (অ্যাক্টিভ) ছিলেন না আবদুল আলী। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে, ছাত্রলীগের মিছিলে, এমনকি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফেরার পথের কিছু ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন আবদুল আলী। গত ৯ জানুয়ারি একটি ছবি পোস্ট করেছেন আলী। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক রঞ্জিত সরকার প্রমুখের সাথে একই সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন আবদুল আলী।
জানুয়ারির ১৯ তারিখ পোস্ট করা একটি ছবিতে কোনো এক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যাচ্ছে আলীকে। গত ২৬ মে পোস্ট করা একটি ছবিতে ছাত্রলীগের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে আবদুল আলীকে। গত ২৭ জুলাই পোস্ট করা আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ২৫ ও ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষ করে সিলেটে ফেরার পথে বাসে অন্যদের সাথে ছবি তুলেছেন আলী। সেই ছবিতে রয়েছেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক আমির হোসেন, সাবেক সদস্য শাহীন মিয়া, দক্ষিণ সুরমা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীন আলী, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপসহ অন্যরা।
একই দিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে গিয়ে মিছিলের একটি ছবি পোস্ট করেছেন আবদুল আলী। সেই ছবির ডান দিকে দ্বিতীয় সারিতে রয়েছেন আবদুল আলী। তবে নির্মমতা হচ্ছে, একই ছবিতে আবদুল আলীর ঠিক সামনের সারিতে রয়েছেন তারই খুনি প্রণোজিৎ!
এসব ছবি মিথ্যে? আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে, ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে তার তোলা সব ছবি ভুয়া? ছাত্রলীগের পতাকা হাতে কেন ছবি তুললেন আলী?
অথচ সুমনকে ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে অস্বীকার করে বসলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির। আর তার সাথে প্রায় একই সুরে সুর মিলিয়ে সিলেট ছাত্রলীগের নেতারা বললেন, ‘মদন মোহন কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোন কার্যক্রম নেই। উক্ত কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি এবং যাবতীয় কার্যক্রম বিগত ৫ বছর পূর্বে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলশ্র“তিতে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নামধারী পরিচয় ব্যবহার করে কোন প্রকার কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকলে এর দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপর বর্তায় না।’ নেতাদের ভাষ্য মতে, কমিটি না থাকলে কেউ ছাত্রলীগের হতে পারে না!
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের জানার কথা নয়, কে ছাত্রলীগ আর কে নয়। শুধু পদবীধারীরাই যে ছাত্রলীগ, তা নয়। গুটিকয়েক নেতা পদ নিয়ে ছাত্রলীগ করেন। এর বাইরে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক কর্মী বাহিনী রয়েছে। আবদুল আলী ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সবসময় মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন। ছাত্রলীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও আলী অংশ নিয়েছিলেন।’(সূত্রঃ সিলেট২৪নিউজ)