রোজা, ঈদ ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা ও পরহেজগার হতে শেখায়

মোহাম্মদ সায়েস্তা মিয়া

romjan_89305কামিয়াবী লাভের মাস রমজানুল মোবারাক। মানুষের ইহ-পরকালীন মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিলের মাস রমজান মাস। মহিম্বাবিত ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনুগ্রহ পূর্বক দান রমজান মাস। আল্লাহর কাছ থেকে রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, সবে বরাত, সবে কদর, সবে মেরা’জ সহ বরকতময় দিবস রজনীগুলো উপহার পেয়েছি আমরা, যাতে তামাম দুনিয়ার মানুষ মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারি উৎসাহ উদ্দিপনায়। রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের পয়গাম নিয়ে পবিত্র রমজান মাস এসেছে আমাদের বাতায়নে আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধী ও পরহেজগারী হতে। রহমত মাগফেরাত ও নাজাত প্রাপ্ত হবো যদি পূত-পবিত্র ভাবে রমজান মাসের হক ও ইবাদত বন্দেগী আঞ্জাম দিতে পারি। ফরজ এবাদতের মাঝে একটি এবাদত হলো মুসলমানের জন্য রোজা রাখা। রোজার আমলের বদলা সয়ং আল্লাহ’র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হওয়ার ঘোষনা ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষিত রয়েছে। রোজা না রাখার জন্য গোনাহগার এবং এর শাস্তি রহিত আছে। দুনিয়াবী আরাম আয়েশে মসগুল হলেও কোন অবস্থায় ধর্মীয় হুকুম অমান্য করা উচিৎ নহে। রোজার মাস ও কোরআনের বিধি নিষেধ আমাদের পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃংখলা শিষ্টাচার ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি এবং মানুষের মধ্যে শ্রেণীবৈষম্যহীনতার উর্দ্ধে উঠে তাকওয়া ধর্য্য, দয়া ও সহানুভূতিশীল হতে অনুপ্রাণীত করে, প্রেমের নিদর্শন তৈরিতে জাগ্রত করে বিবেক’কে। “আল্লাহকে ভালোবাসার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহ’র সৃষ্ট জীবকে ভালবাসা”। “যে আল্লাহর সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতি আল্লাহ দয়া পদর্শন করেন না”। কোরআন হাদীসের এই অমীয় বাণীগুলোর আলোকপাতে ¯্রষ্টার অনুগ্রহ লাভের আশায় আমাদের চারপাশের যে সব আল্লাহ’র সৃষ্টি রয়েছে এসকল সৃষ্টির হক ও আমাদের উপর তাদের প্রাপ্ত অধিকার আদায় করতে হবে। রমজান মাসের শুরু থেকে দ্বীনি আমলের পাশাপাশি অনেক কর্তব্য ও আতœীয় স্বজনের হক, পাড়া-প্রতিবেশির হক আদায়ে সজাগ হওয়ার এবং আদায় করার গুরুদায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। পবিত্র কোরআন আমাদের জীবন বিধান এর প্রতিটি নির্দেশ পালন করার নিয়ত সহিহভাবে করতে হবে। হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এবাদতের একটি পবিত্র রজনী রয়েছে রমজান মাসের শেষার্দ্ধের বেজোড় কোন একটি রাতে। যা তালাস করে ইবাদত করার ও এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত না হওয়ার তাগিদ আছে। বিশ রমজান থেকে উনত্রিশ বা ত্রিশ রমজানের ভিতরে যে কোন একটি বেজোড় দিবসে এই রাত্রটি হওয়ার পক্ষে ইসলামী চিন্তাবিদদের অভিমত। বিশেষ করে সাতাশ রমজানে পবিত্র সবে কদর রজনী ধরে নেওয়া হয়, এবং সারা রাত এবাদত বন্দেগিতে মুসলমানগন মসগুল থাকেন। সবে কদরের রাত্রে এবাদত করলে হাজার মাসের চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। কামনা থাকছে এই পবিত্র রজনীর ফজিলত থেকে যেন আমরা কেউ বঞ্চিত না থাকি। এজন্য সচেতন হওয়া জরুরী। বিশ রমজান থেকে ইতেকাফ পালন করার সুন্নতি আমল আমাদের মুসলিমদের জন্য উচিৎ। গরীব দুস্থদের আর্থিক সাহায্য ও রোজার ত্রুটি মুক্তির জন্য ফরজ ইবাদতের পূর্নতা স্বরূপ (কাফ্ফারা হিসাবে) ফিতরা প্রদানের বিধান আমাদের উপরে রয়েছে। যে ফিতরা পাড়া-প্রতিবেশি আতœীয় অনাতœীয়দের কাছে খুশির দিবশের জামাতের আগে আদায় করা আবশ্যক। ‘খুশির দিবস’ অর্থাৎ ঈদ। একটি মাসের সিয়াম সাধনার পর সবে কদর ফজিলত প্রাপ্ত ও সঠিক নিয়মে ফিতরা আদায় শেষে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের একটি দিবস দিয়েছেন সব মুসলিম মিলে আনন্দ করার জন্যে। ঈদের আনন্দ শুধু ধনীর জন্য নয়। ঈদের আনন্দ গরীব ধনী উভয়ের। যাদের ঈদ করার সামর্থ্য নেই তাদের প্রতি সদয় সহানুভূতি এবং দান, তাদের ভাল মন্দ খোজ খবর রাখার দায়িত্ব ধনী শ্রেণীর উপর রয়েছে। যারা গরীবের হক আদায় করবে না তাদের আমল বন্দেগী পরিপূর্ণতা পায় না। “যারা রমজান মাস পেল, এবং জীবনের গোনাহ মাফ করাতে পারল না তাদের চেয়ে বদবখ্তী আর কেউ নেই”। তাই হিংষা বিদ্ধেষ ও অহংকার পরিত্যাগ করে একমাত্র ¯্রষ্টাকে খুশি করার শর্তে পরিপাশ্বিক হক আদায় করে কামিয়াবী হাসিলের উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনা ও আমল করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নানান ঝামেলা আছে তাতে আমাদের হাত গুঠিয়ে বসলে ঈমানী দায়িত্ব পালন হবে না। গরীব দুস্থরা যদি নতুন জামা কাপড়হীন নিরানন্দ হয়ে ঈদের দিনটি পার করে তাতে সামাজিক ও পারিপাশ্বিক বৈষম্য বাড়বে আমরা সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবো কেউ খোদার কাছে জবাবদিহী করতে পারব না। এতিম অসহায়দের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব। ফিতরা যাদের উপর ওয়াজিব তারা ঈদের জামাতের পূর্বে তা আদায় করার প্রতি সচেতন থাকবেন। ঈদ আমাদের সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ স্থাপনের প্রধান অন্তরায়। ধনী গরীব সবাইকে নির্বিশেষে এক কাঁতারে দাড় হবার শিক্ষা প্রদান করে। ঈদের জামাতে ধনীর পাশে গরীব এক কাঁতারে দাড়ালে ‘খস-খসি’ ‘ইস-ফিসি’ ও স্থান ত্যাগ কিংবা গরীবের প্রতি ঘৃনা পদর্শন করা যাবে না। এধরনের কাজ করলে ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ নারাজ হবেন। নেকির বদলে অভিশাপের ভাগিদার হবেন তিনি। ঈদের জামাতে এক কাঁতারে সবাই দাড় হবার বিধান আল্লাহ’র। যারা আল্লাহ’র বিধানের বিরোধী তারা অভিশপ্ত। এধরনের আমল যদি আমাদের মাঝে থাকে তা পরিহার করা উচিৎ। “ হিংষা, অহংকার, আমল জ্বালিয়ে দেয়”। “ কারো ভিতরে শরিষা পরিমান হিংষা থাকলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা”। এই কথাগুলো কোরআন হাদিসের। সমাজপতি ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ সমতা প্রতিষ্টা হলে সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় অশান্তি দূর হবে, শান্তি বইবে সমান্তরালে। মানুষের সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য সঠিক ভাবে পালনে ব্যত্যায় ঘটলে ইহ-পরকালীন অকল্যাণ ও শাস্তি আছে। আমাদের ভাল’র জন্য ইসলামী আদর্শ ও তাকওয়া অর্জন অত্যাবশ্যক। ‘তাকওয়া’ পরহেজগারী মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করে, খোদাভীতিও মানুষকে সম্মানিত করে। ধর্য্য, দয়া, দানও মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেয়। দান খয়রাত সদকা মানুষকে মুছিবত হইতে রক্ষা করে। বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত, তারাবির নামাজ কায়েম করা, জিকির করা, দেশ রাষ্ট্রের ভাল করার নিয়ত করা এ সবই অধিক সওয়াবের ইবাদত। এই সব কিছু আমলের একাধিক সওয়াব হাসিল করা যায় রমজান মাসে। এজন্য রমজান মাসকে বলা হয় গোনাহ মুক্তির মাস এবং সকল মাসের চেয়ে উত্তম মাস। ইসলামী আদর্শবিহীন জীবন ব্যবস্থা বিফল। একটি মানুষের জন্ম পরবর্তী মৃত্যু পর্যন্ত যা দরকার যতো বিধির নিষেধের প্রয়োজন তা রয়েছে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনে যাকে সমস্থ পৃথিবীর শ্রেষ্ট মনিষীগন এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন কোরআন হলো, ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব; একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব বেশি, আছে অধিক সওয়াব প্রাপ্তির উপায়। রোজা সবে-কদর, ফিতরা, তারাবিহ, তেলাওয়াত, যাকাত, ঈদ পরিপূর্ণভাবে পালন, আমল করার তাওফিক যেন নসীব হয় এই থাকছে আল্লাহ’র দরবারে দরখাস্ত। (আমীন)

মোহাম্মদ সায়েস্তা মিয়া
সভাপতি
সিলেট সাহিত্য ফোরাম
মোবাইল ০১৭১৪-৬৮৫১৬৫।