ডিজিটালের ছোঁয়া এবার লাগছে সিলেট জজকোর্টে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কলম-কাগজে লেখার দিন শেষ। কাগজ পড়ে থাকবে ফাইলবন্ধি হয়ে। ডিজিটালের ছোঁয়ায় ভাস্বর হবে সিলেট জজকোর্ট। তথ্যপ্রযুক্তির সবধরণের ব্যবস্থা রাখা হবে বিচারকদের জন্য। আসামীদের জবানবন্ধী আর কলম দিয়ে কাগজের পাতায় লিখতে হবে না। সে কাগজও আর ভিজবে না বা পুড়ে ছাইও হবে না। আসামীদের জবানবন্ধী আর স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য রেকর্ডে প্রস্তুত থাকবে ভয়েস রেকর্ডার। সাথে আছে ল্যাপটপ আর ট্যাব।
উচ্চ আদালতের মতো নিম্ন আদালতের দৈনন্দিন কার্যতালিকাও দেখা যাবে অনলাইনে। অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের মধ্যে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১২৫টি ল্যাপটপ ও দুইশ’ ট্যাব। এসব নানা উদ্যোগের মাধ্যমেই বিচার দেশের অন্যান্য বিভাগের মতো বিচার বিভাগেও লাগতে শুরু করেছে ডিজিটালের হাওয়া। এর ফলে দেশের আদালতগুলোতে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা অনেকটাই কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
দেশে প্রথম বারের মতো সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তন এনে বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে আদালতে সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে ভয়েস রেকর্ডিং সিস্টেম চালু হচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) অর্থায়নে জুডিশিয়াল স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় বিচার বিভাগে এ ডিজিটালাইজেশন আসছে বলে জানা গেছে।
দেশের প্রথম হিসেবে সিলেট জেলা আদালতের মাধ্যমে এ পদ্ধতি শুরু হচ্ছে। সিলেট জেলা আদালতে সর্বমোট ৪৪টি এজলাস রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি এজলাসে ভয়েস রেকর্ডিং সিস্টেম চালু করা হবে জানা গেছে। সিলেট জেলার পর চট্টগ্রাম জেলা আদালতকে এ পদ্ধতির আওতায় আনা হবে বলেও জাস্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে এ কাজ শুরু করতে ৩৫/৪০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্টে স্থাপিত জাস্টের প্রধান কার্যালয় থেকে এ পদ্ধতির সকল দেখ-ভাল করা হবে। এ পদ্ধতিতে আদালতে সাক্ষীর সামনে একটি ভয়েস রেকর্ডার থাকবে, যার মাধ্যমে সাক্ষী যে সাক্ষ্য দেবেন তা আদালতে রেকর্ড অবস্থায় লিপিবদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে এ সাক্ষ্য কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে লেখা হবে। এর ফলে বিচারকদের আর সাক্ষীর জবানবন্দী হাতে লিখতে হবে না।
কোর্ট রেকর্ডিং সিস্টেমে আদালতের ভেতরে একটি কম্পিউটারে পাঁচটি মনিটর থাকবে। একটি বিচারকের সামনে, একটি আসামি, একটি সাক্ষী, একটি আইনজীবীদের ও অপরটি সাক্ষ্য লিপিবদ্ধকারী কর্মকর্তার সামনে। সাক্ষী তার সাক্ষ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা কম্পিউটারে সেটা লিখবেন এবং মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই দেখতে পারবেন। ফলে কোন তথ্য বাদ যাওয়া কিংবা ভুল লেখার সম্ভাবনা থাকবে না।
সনাতন পদ্ধতিতে দেখা যায় একজন বিচারকের হাতের লেখা আরেকজন বিচারক বা অন্য আদালত বুঝতে পারেন না অথবা অনেকে দাবি করেন যে, বিচারক কিছু কথা লেখেননি বা তিনি কিছু কথা মিস করে গেছেন। এ পদ্ধতিতে সেই সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেটের মাধ্যমে এটা শুরু হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেশের সবগুলো জেলা আদালতে এ পদ্ধতি চালু হবে। এ পদ্ধতির ফলে দ্রুত বিচার ও সাক্ষ্যগ্রহণে নির্ভুলতা রক্ষায় কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল।
এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে সিলেট জেলায় কোর্ট ভয়েস সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এর উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।
সাব্বির ফয়েজ বলেন, বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করার যে প্রচেষ্টা রয়েছে, এটা তারই অংশ। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল আদালতে এ সিস্টেম চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে আইন কমিশন মামলার জট কমানো ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি কার্যপত্র প্রস্তুত করে। এতে বলা হয়, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিতে হবে। সহকারী জজসহ প্রত্যেক বিচারকের জন্য একজন করে দক্ষ স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ দিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিচারকদের নিজ হাতে সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করার পরিবর্তে কম্পিউটার টাইপ চালু করা দরকার।
প্রত্যেক আদালতে প্রিন্টারসহ একটি কম্পিউটার ও আরও তিনটি মনিটর সরবরাহ করতে হবে। বিচার কাজে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে সাক্ষীর জবানবন্দী স্টেনোগ্রাফার কম্পিউটারে টাইপ করবেন এবং তা সঠিকভাবে রেকর্ড হচ্ছে কি না তা অবলোকন করার জন্য বিচারকসহ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের সম্মুখে একটি করে মোট তিনটি মনিটর থাকবে।