লঙ্ঘিত হচ্ছে শ্রম আইন : সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি হতে বঞ্চিত চা-শ্রমিকরা

Tea Garder Workersনূরুল মোহাইমীন মিল্টন, কমলগঞ্জঃ দৈনিক মাত্র ৬৯ টাকা মজুরিতে দেশের চা-শ্রমিকরা দুঃখ-কষ্টে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেলেও দীর্ঘ দিন ধরে চা-শ্রমিকদের মজুরি ৬৯ টাকায় আটকে আছে। তার উপর চা-শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান করা হয় না।
২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনে সকল শ্রমিকদের ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলেও চা শ্রমিকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সম্প্রতি বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা সংশোধিত শ্রম আইন-২০১৩ অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদানের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন।
চা বাগান শ্রমিকদের অভিযোগে জানা যায়, চা শ্রমিকরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি, কল্যাণ তহবিল ও অংশগ্রহণ তহবিলের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সপ্তাহে ৬ দিনের মজুরি হিসেবে তাদের ৪১৪ টাকা প্রদান করা হয়। অথচ ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনের ১০৩ (গ) ধারা মোতাবেক সকল শ্রমিকদের ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আলীনগর চা-বাগানের রূপনারায়ণ কৈরী, সজল বাক্তি, রণজিৎ নুনিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা ছুটির দিনের মজুরি প্রদানের জন্য গত ১৪ জুন বাগানের ব্যবস্থাপক বরাবর লিখিত আবেদন পেশ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা আইনিভাবে প্রাপ্য সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট বাগান ব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করছেন বলে তারা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির মজুরির বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে চা-শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান ও শ্রম আইনের ২৩৪ ধারা মোতাবেক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল স্থাপন করার জন্য সকল চা-বাগানের ব্যবস্থাপককে নির্দেশনা দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের শ্রীমঙ্গলের উপ-মহাপরিদর্শক।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে সম্প্রতি ঐ নির্দেশনার আলোকে গত ১৪ জুন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত চিঠি দিয়ে শ্রম আইনের ১০৩ (গ) মোতাবেক সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি (বকেয়াসহ) এবং ২৩৪ ধারা মোতাবেক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
চা-শ্রমিক সংঘের আহবায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, দীর্ঘ দিন হতে আমরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান করার দাবি জানিয়ে আসছি। ন্যায্য মজুরি, উৎসব ভাতা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি দাবিতে চা-শ্রমিক সংঘের পক্ষ থেকে একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস বলেন, চা-বাগানে শুধু এই দুইটি (১০৩ ও ২৩৪) ধারাই নয় শ্রম আইনের ২(১০) ধারায় গ্রাচ্যুইটি, ৪ ধারায় চাকুরি স্থায়ী করা, ৫ ধারায় পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ১০৮ ধারায় অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি প্রদান করা বাধ্যতামূলক হলেও কর্তৃপক্ষ তা লঙ্ঘন করে চলেছেন। তিনি শ্রম আইন বাস্তবায়ন ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে চা-শ্রমিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, এ বিষয়টি ২০০৯ সালে তাদের দাবিনামায় আছে এবং এ বছর চুক্তিতেও এটি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আশাকরি এ দাবিটি গৃহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রীমঙ্গলের উপ-মহাপরিদর্শক আজিজুল ইসলাম বলেন, চা-শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান না করা বে-আইনী, ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনের ১০৩ (গ) ধারা মোতাবেক সকল শ্রমিকদের ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই বিসিএস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বাগান ব্যবস্থাপকদ্বয়কে পরামর্শ প্রদান করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রম আইন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, সারাদেশে চা বাগান সমুহে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া বিষয়টি বিসিএস কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি দেয়া হবে।