নবীগঞ্জে স্কুলের নামে কোটি টাকা সম্পত্তি জবর দখল ॥ এলাকায় উত্তেজনা
স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে জনতা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকেঃ নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ হাইস্কুল সংলগ্ন সরকারের কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল করেছে কতিপয় প্রভাবশালী ভুমি খেকো ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আনোয়ার হোসেন সরজমিনে গিয়ে অবৈধ দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য ৩ দিনের সময় বেধেঁ দেন। কিন্তু রির্পোট লেখা পর্যন্ত উক্ত স্থাপনা সড়িয়ে নেয়া হয়নি। বরং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অবৈধ দখলদার সকদিল হোসেন দম্ভোক্তি দিয়ে বলেছেন, আদালতের নির্দেশ ব্যতিত কারো কথায় স্থাপনা সরাবেন না। ফলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে যে কোন সময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা এই অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিতে পারে বলে আবাস পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর মৌজার জেএলনং ১৮, খাস খতিয়ান-১ ও দাগ নং-১২৮ এর গোপাট রকম ভুমির ২২ শতক ভুমির মধ্যে প্রায় ৭/৮ শত কোটি টাকার সরকারী ভুমি গত ২৭ জুন গভীর রাতে একদল ভুমি খেকো স্থানীয় ইনাতগঞ্জ স্কুলের নাম ব্যবহার করে জবর দখল করে একটি টিন সেট ঘর নির্মাণ করেছে। এর আগে ২৭ জুন দিনের বেলায় উক্ত ভুমি জবর দখলের খবর পেয়ে ইনাতগঞ্জ তহশীল অফিস অবৈধ দখলদারদের মৌখিত ভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছিল। তা না মানায় ২৮ জুন স্থানীয় তহশীলদার মহসিন ভুইঁয়া ৮৭ নং স্মারকে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি বরাবরে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে একটি পত্র প্রেরন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আনোয়ার হোসেন সরজমিনে গিয়ে অবৈধ দখলদারদের তাদের স্থাপনা ৩ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য নিদের্শ প্রদান করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিনে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বাতেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা শকদিল হোসেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলম, ইউপি মেম্বার জিয়াউল ইসলামসহ এলাকার শত শত মানুষ ভিড় করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন বলেন, এই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে স্কুলের পরিবেশ বিপন্ন হবে। বকাটে ছেলেদের আড্ডার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে স্কুলের ছাত্রীরা সামাজিক ব্যধি ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে ওই ভুমির উপর দিয়ে ইনাতগঞ্জ বাজার সহ আশপাশ এলাকার মানুষের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনাও ভেস্তে যাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ দখলদারদের ৩ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। তারা নিজ দায়িত্বে অপসারন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার আগে ভুমি টুকু সার্ভে করার জন্য সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছে। এর রির্পোট পাওয়ার পর পরই ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন ওই কর্মকর্তা। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন বলেন, সরকারের কোটি টাকার ওই সম্পত্তি স্কুল নাম ব্যবহার করে একদল ভুমি খেকো রাতের আধারে ওই জায়গা টুকু দখল করে নিয়েছে। এতে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধসহ এখানকার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন ইতিমধ্যে ওই সব ভুমি খেকোরা কে কোন রুম নিবেন, স্কুলে কত টাকা দেয়া হবে তা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শকদিল হোসেন তার বাড়ির রাস্তা সংলগ্ন সরকারের বিপুল টাকা মুল্যের খাস ভুমি জবর দখল করে রেখেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরে ওই জায়গায় প্রয়োজনে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারনের সুবির্ধাতে একটি মিনি পার্ক তৈরী করে দেয়া হবে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শকদিল হোসেন বলেন, স্কুলের স্বার্থে যে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে তা ১২৮ দাগ নয়, ১২৭ দাগের ভুমি। যা স্কুল বন্দোবস্ত এনেছে ১৯৮০ইং সনে। তবে তার এই বক্তব্যের সাথে প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। ইনাতগঞ্জ তহশীল অফিসের তহশীলদার মহসিন ভুইঁয়া বলেন, ১২৭ দাগের ভুমি স্কুল থেকে অনেক দুরে। দখলীয় ভুমির দাগ সরকারের খাস খতিয়ানের ১২৮। এছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ গত ৭ জুন বন্দোবস্তের জন্য ভিপি মামলা নং ৪০/৬৬, ২২৪/৭৫-৭৬,ইং, ৩৮/৭৯-৮০ আবেদন করেন। আবেদনের অন্তভুক্ত দাগ গুলো হলো ৩৭, ৩৮, ১৬৫ ও ১৬৬, মোট মোয়াজি ১ একর ৮৮ শতক। যা এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই দাগ গুলো ব্যতিত স্কুলের নামে কোন ভুমি বন্দোবস্ত দেয়া হযনি। এদিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কতিপয় কিছু লোক সরকারের এই কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল করে হজম করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরকারের ওই সম্পত্তি ভুমি খেকোদের হাত থেকে রক্ষা করে জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা ভুমি প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের দেয়া ৩ দিনের আল্টেমেটাম ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হলে ইনাতগঞ্জবাসী তা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ গ্রহন করবে। কোন ভুমি খেকোকে সরকারের কোটি টাকার সম্পত্তি হজম করতে দেয়া হবেনা।