বিশ্বনাথে ধলীপাড়া গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের : প্রবাসীর দেয়াল ভাঙ্গার পায়তারা ও হয়রাণী করার অভিযোগ
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: বিশ্বনাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল আলীকে হয়রাণী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ধলীপাড়া গ্রামের কিছু ব্যক্তি পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রবাসীর বাড়ির একটি দেয়াল ভাঙ্গার পায়তারায় একাধিক বার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগপত্র দায়ের করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আবদুল আলীর প্রবাসী কন্যা রওশন আরা প্রায় ৩ বছর পূর্বে প্রবাসীর (আবদুল আলী) বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগপত্র দায়েরকারী রামাপাশা ইউপির সাবেক মেম্বার নূরুল হকের ভাই রেহামউদ্দিনকে ‘তালাক’ দেন। এঘটনার জের ধরে তালাক দেওয়ার প্রায় ১ বছর পর থেকে (২বছর ধরে) উভয় পরিবারের মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয়। এরই জের ধরে নূরুল হক বাদী হয়ে প্রবাসী কর্তৃক সরকারি ভূমিতে অধৈবভাবে দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে মর্মে ২০১৩ সালের ৬মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। তবে প্রায় ৫ বছর পূর্বে সরকারি বরাদ্ধের পাশাপাশি প্রবাসী আবদুল আলীর কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগীতা নিয়ে নিজে ইউপির মেম্বার থাকাকালীন সময়ে নূরুল হক সড়কটিতে ইটসলিং-এর কাজ করিয়ে ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটসলিংকৃত সড়ক থেকে প্রবাসী আবদুল আলীর নির্মাণকৃত দেওয়ালের দূরত্ব প্রায় ২ ফুট। প্রবাসীর দেয়ালের অপর পার্শ্বে সড়ক ঘেঁষে সাবেক মেম্বার নূরুল হকের আতœীয়-স্বজনরা আরো দুটি দেওয়া নির্মাণ করেছেন। ১৩/১৪ ফুট প্রস্থের গ্রামের সড়কটির অনেক অংশে বেশির ভাগই অবৈধ থাকার পরও সেগুলো উচ্ছেদের জন্য কারও কোন অভিযোগ নেই। শুধু মাত্র প্রবাসী আবদুল আলীর ব্যক্তি মালিকানাধীন উপজেলার ধলীপাড়া মৌজার ১২০০ দাগের ভূমিতে নির্মিত দেয়ালটি ভাঙ্গার জন্য একের পর এক অভিযোগপত্র দায়ের করছেন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী আবদুল আলীর দেয়ালকে কেন্দ্র করে একাধিক বার তদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে। এরমধ্যে ২০১৩ সালের ২মে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের কানুনগো মো. ইসমাইল, একই বছরের ৬জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামনি চাকমা, ২০১৪ সালের ১৫জানুয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখার সার্ভেয়ার মঈনউদ্দিন হোসেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার কানুনগো মো. শাহজাহান, একই বছরের ৬এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার কাজী আরিফুল রাজস্ব শাখার সার্ভেয়ার মোস্তফা কামাল, ভূমি হুকুম দখল শাখার সার্ভেয়ার কমল কান্তি দে, ১১মে সিলেটের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আনিছুর রহমান নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, প্রবাসী আবদুল আলীর নির্মাণকৃত দেয়াল তাঁর (প্রবাসী) ব্যক্তি মালিকানাধীন ১২০০ দাগের ভূমিতে অবস্থিত। দেয়ালের পাশ্ববর্তি সরকারি সড়কটির প্রস্থ নক্সা অনুযায়ী যথাযত রয়েছে। স্থানীয় জনগণ সড়ক দিয়ে চলাচলে কোন ধরনের প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হবে না। শুধু মাত্র ২০১৩ সালের ২৮জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখার সার্ভেয়ার আবদুল লতিফ ও ২৪সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার সার্ভেয়ার দেলোয়ার হোসেন নিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন দেয়ালটি সরকারি ভূমিতে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে, বিষয়টি ‘অন মেরিট’-এ নিষ্পত্তি করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করতে ২০১৪ সালের ২১মে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. শামছুল আলম চৌধুরী আদেশ প্রদান করেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য চলতি বছরের ২৮ জুন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহেল মাহমুদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২ সার্ভেয়ার বিরুদপূর্ণ ভূমি পরিমাপ করেন।
প্রবাসী আবদুল আলী সাংবাদিকদের বলেন, নূরুল হকের আতœীয়-স্বজনসহ গ্রামের মুরব্বীদের উপস্থিতিতে সীমানা নির্ধারণ করেই দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়ে ছিল। আমাকে হয়রাণী করতেই সে মিথ্যা অভিযোগগুলো দায়ের করছে। বিগত সময়ে জালিয়াতি করতে গিয়ে সে (নুরুল হক) নিজ গ্রামের আঙ্গিনা বিবির দায়ের করা মামলায় (সিআর ৪১/২০১১) মামলায় আসামী হয়ে ছিল। মামলাটি এখনও আদালতে চলছে। ভাই-ভাতিজাদের সাথে সংঘর্ষ ও গুলি করার অভিযোগে বেলালউদ্দিনের দায়ের করা মামলায়ও (সিআর ১২৪/২০০৬) সে (নূরুল হক) আসামী ছিল।
সাবেক মেম্বার নূরুল হক বলেন, সরকারি জায়গা উদ্ধারের জন্যই এলাকাবাসির পক্ষে অভিযোগপত্র দায়ের করেছি। ধারাবাহিক ভাবে সেই অভিযোগপত্রের অগ্রগতি হচ্ছে। ভাইয়ের বিয়ের ছাড়াছাড়ির (তালাক) জের ধরে কিছু করা হয়নি, বিরোধও নেই।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহেল মাহমুদ বলেন, পূর্বের প্রতিবেদনগুলো দেখা হবে এবং বর্তমান তদন্ত রির্পোট প্রকাশের পর যা সঠিক থাকবে, সে অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।