আরেকটি জগন্নাথ হল ট্রাজেডির আশঙ্কায় বড়লেখার সুফিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আরেক ‘জগন্নাথ হল ট্রাজেডি’র আশঙ্কায় বড়লেখার সুফিনগর এলাকার মানুষ। আর এ আশঙ্কাটি তৈরি হয়েছে উপজেলার সুফিরগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুকিপূর্ণ পরিত্যাক্ত ঘোষিত ভবনটিকে ঘিরে।
বড়লেখা উপজেলার সুফিনগর গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘সুফিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বিদ্যালয় বলতে ঐ একটি ভবন যা আজ থেকে ২২ বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুল ভবনটির দেয়ালে বিভিন্ন স্থানে ফাটল। প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। কয়েকটি স্থান থেকে ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে ছাদের আস্তরণ। যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে পুরো ছাদ। আর তা যদি ঘটে তবে আরেক ‘জগন্নাথ হল ট্রাজেডি’র মতো ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটবে এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
এছাড়াও বাংলাদেশের ঝুকিপূর্ণ ভূমিকম্প-প্রধান এলাকা হিসেবে সিলেট অঞ্চল শীর্ষে অবস্থান করায় এই বিদ্যালয়টির ভাগ্যে কী আছে তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারে। শিক্ষা বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ভবনটি শ্রেণিশিক্ষা পরিচালনার অনুপযোগী বলে তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর রিপোর্ট প্রদানের পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বড়লেখা উপজেলার ৩ নং নিজবাহাদুর পুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান সরফ উদ্দিনের। তিনি জানান, কয়েক দফা আবেদন করেও স্কুলের জন্য একটি নতুন ভবনের বিষয় নিশ্চিত করা যায়নি। খুবই বিপদজনক অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতাপ রঞ্জন দে’র সাথে আলাপ করে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে এলজিইডি কতৃক নির্মিত একমাত্র ভবনটি ২০১৪ সালে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, নতুন ভবনের ব্যাপারে আমরা আবেদন করেছি। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে এই ভবনেই ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ বারবার ধর্ণা দিয়ে আমাদের সুফিনগর বিদ্যালয়টি মেরামতের কোন সুরাহা করা গেল না। তবে তাদের অভিযোগ রহস্যজনক কারণে এই বিদ্যালয়টিকে পাশ কাটিয়ে অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার চলছে।
এ বিষয়ে ডেইলি সিলেট ডট কম’র পক্ষ থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অরবিন্দ কর্মকারের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, সুফি নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে আমার কাছে কোন তথ্য নাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১০ সালে একটি জরিপ হয়। সেই জরিপ অনুযায়ী যে সকল স্কুলের ভবন ঝুকিপূর্ণ তা সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। আগামী ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। তবে নতুন করে যে সকল স্কুলে ঝুকিপূর্ণ ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে তার একটা তালিকা আমরা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো কাজই করা হবে।
২০১০ সালের জরিপ অনুযায়ী কাজ চলবে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে যদি সুফিনগরে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটে এর দায় কে নিবে এমন প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দ কর্মকার বলেন, এর সম্পূর্ণ দায় ঐ স্কুলের হ্যাডমাস্টার সাহেবের। কেননা যে সকল স্কুলের ভবন ঝুকিপূর্ণ সে সকল স্কুলকে বলা হয়েছে ঝুকিপূর্ণ ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো যাবে না। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রচেষ্টায় কাঁচা ঘর নির্মাণ করে ক্লাস চালাতে হবে নয়তো খোলা আকাশের নিচে চলানোর নির্দেশ রয়েছে। এগুলো উপেক্ষা করে হ্যাড স্যার যদি ঝুকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেন তবে তো দায় দায়িত্ব তাঁরই হবার কথা।