সিলেট বিভাগীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রে ২০ পদের ৮টিই শূন্য

mayaনুরুল হক শিপুঃ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত সিলেট বিভাগের একমাত্র ‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’ জনবল সংকটে ভুগছে। এ সংকট নতুন নয়। দীর্ঘদিন থেকেই জনবল সংকট নিয়ে কার্যক্রম চলছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, আশ্রয় ও পূর্নবাসন কেন্দ্রটি। যার ফলে নারীদের বিভিন্ন সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় বিভাগের একমাত্র ওই নারী সহায়তা কেন্দ্রটির এখন প্রদান সমস্যা জনবল সংকট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনা করতে মঞ্জুরিকৃত পদ সংখ্যা হচ্ছে ২০টি। আর ওই ২০ টি পদের মধ্যে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পদই রয়েছে শূণ্য। যে ১২ টি পদে কর্মকর্তা ও কর্মচারি দায়িত্ব পালন করছেন পদগুলো হচ্ছে, উপ-পরিচালক (একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট), পুলিশ পরিদর্শক, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, ট্রেড প্রশিক্ষক, হিসাবরক্ষক, সহকারি মেট্রন, স্টোর কিপার, গার্ড ২ জন, এমএলএসএস, বাবুর্চি ও সুইপার। আর সহকারি পরিচালক (কে.ডে), মেডিকেল অফিসার, আইনজীবী, মেট্রন-১, লিগ্যাল এসিষ্টার্ন, বেঞ্চ সহকারি, ও অফিস সহায়ক পদ ২টিসহ ৮টি পদ শূণ্য রয়েছে। পদগুলো শূণ্য থাকায় আইনী কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা, কাউন্সিলিং, আদালতে মামলা পরিচালনা, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, অভিযোগ গ্রহণ, আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারী নারীরার শিশুদের শিক্ষা প্রদান, প্রশিক্ষণ সেবাসহ বেশ কয়েকটি সেবা প্রদানে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, সম্প্রতি ওই নারী সহায়তা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট-হবিগঞ্জের নারী সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে সেবা ও প্রশিক্ষনার্থীদের সাথে কথাও বলেছেন। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তাও শুনেছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ জন নারী ও তাদের সন্তানসহ মোট ১২ জন বর্তমানে সেবা পাচ্ছেন। সেবার মান খুবই ভাল শুনে ওই সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেয়া চৌধুরীকে জানিয়েছেন, নারী সহায়তা কেন্দ্রের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকট। যে ৮টি পদ শূণ্য রয়েছে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বলে তাঁকে জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা কেয়া চৌধুরীর সহযোগীতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী সবুজ সিলেটকে জানান, ‘গত শুক্রবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জয়িতার একটি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালককে সিলেট বিভাগীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রের জনবল সংকটের বিষয়টি তিনি অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় নারী সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা নেই। ওই বিষয়টির কথাও তাদেরকে জানিয়েছেন। জবাবে তারা বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবেন বলে তাঁকে আশ্বস্থ করেছেন।
কেয়া চৌধুরী জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে একটি বিশেষ বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। যে সব নারী সিলেট আশ্রয় কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে চলে যাবেন, তাদেরকে ওই বরাদ্দ থেকে সেলাই ম্যাশিন দিয়ে সহায়তা দিতে পাশে থাকার প্রতিশ্রিুতি ব্যক্ত করেন তিনি।’
সিলেট বিভাগীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট আসমা মোজাম্মেল জানান, ‘২০টি পদের মধ্যে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূণ্য রয়েছে। বিশেষ করে আইনজীবী নাই। আইনজীবী না থাকার কারণে আইনী সহায়তা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক নাই, যার ফলে আশ্রয় কেন্দ্রের কেউ অসুস্থ হলে তাকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় কিংবা রিকশা করে হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। চিকিৎসক থাকলে এ সেবাটা কেন্দ্রেই দেয়া যেত। মেট্রন নেই, সহকারি মেট্রনকে ওই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। টাইপিস্ট নাই। ওই পদের কাজ চালাতে হচ্ছে হিসাবরক্ষককে। তিনি বলেন, আমি এপ্রিলের ৬ তারিখে নারী সহায়তা কেন্দ্রে যোগদান করি। এখানে একজন সহকারি পরিচালক ছিলেন। তিনি এখন নাই। তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। ওই পদে আর কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। একটি বিভাগীয় অফিসে সব সময় উপ-পরিচালক অবস্থান করা সম্ভব নয়। তাই সহকারি পরিচালকেরও প্রয়োজন। উপ-পরিচালক আসমা মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা সব সময় ভাল সেবাটুকুই দিয়ে যাচ্ছি। এরপরও সিলেট বিভাগীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রের সেবার মান আরো বিদ্ধি করতে হলে ৮টি শূণ্য পদেই জনবল প্রদান করা জরুরি।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও নারী সহায়তা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় সিলেট বিভাগীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রের সেবা নগরীর মজুমদারীতে একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর গত বছরের ২০ মে নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় নিজস্ব ভূমিতে ভবন নির্মাণ করে চলছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, আশ্রয় ও পূর্নবাসন কেন্দ্রটি।