মৌলভীবাজারে নিজ কন্যার অনিষ্ট করলো শ্রীমঙ্গলের শারমিন
মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে শুধুমাত্র নিজের জেদ চরিতার্থ করার জন্য নিজ কন্যার অনিষ্ট সাধন করলেন এক মা। আর, শুধুমাত্র মায়ের জেদের কারণেই শেষপর্যন্ত স্বামীকে ত্যাগ ও একমাত্র পুত্রকে পিতৃহীন করলেন এক স্ত্রী। জানা যায়- মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বরমান গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র নুরুল ইসলাম শামিমের সাথে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরের বিনিময়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের আব্দুস সহিদের কন্যা মুসলিমা আবেদ শারমিনের বিয়ে হয়েছিল গত ২০১০ সালের ২৪ মার্চ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শারমিনের বেপরোয়া মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকলেও, পারিবারিক ঝামেলা এড়াতে শামিম না বোঝার ভান করে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। কিন্তু, শামিমার বেপরোয়া ও বেহায়াপনা ক্রমেই সীমা লংঘন করতে থাকে। বিভিন্ন সময় শারমিনের বান্ধবী পরিচয়ে বিভিন্ন মেয়ে তাদের ছেলে বন্ধু নিয়ে সময় কাটানোর জন্য বেড়াতে আসার ঘটনা বাড়তে থাকে। শামিমের পরিবারের লোকজন এ নিয়ে প্রশ্ন করলে শারমিন তাদেরকে লাঞ্চিত করতেন। কাউকে কিছু না বলে যখন-তখন তিনি স্বামীগৃহ ত্যাগ করে তার মাতৃগৃহে চলে যেতেন। নিজের অপরাধ চাপা দিয়ে শামিম ও তার পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ তুলতেন। পরে শামিম গিয়ে বুঝিয়ে অনেক দেন-দরবার করে তাকে নিয়ে আসতেন। একদিন শামিমের উপস্থিতিতেই এক ছেলেকে সাথে নিয়ে শারমিনের বাল্যবান্ধবী পরিচয়ে এক মেয়ে বেড়াতে আসার ঘটনা সম্পর্কে শামিম জানতে চাইলে শারমিন কোন জবাব না দিয়ে উল্টো তার সাথে অসদাচরণ করেন। এতে দুঃখ পেয়ে শামিম বাধ্য হয়ে বিষয়টি তার শ্বশুর পরিবার অর্থাৎ শারমিনের পিতৃপরিবারে বিচারপ্রার্থী হন। কিন্তু, মাতৃশাসিত শারমিনের পিতৃপরিবারের প্রধান শারমিনের মা মির্জা ফাতেহা বেগম তার কন্যা শারমিনের ব্যাপারে কোন প্রতিকার না নিয়ে উল্টো শামিমকেই শাসাতেন। এমনি অবস্থার মাঝেই গত ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর শামিম-শারমিনের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় পুত্রসন্তান মনিরুল ইসলাম সাফওয়ান। কিন্তু, শারমিনের কোন পরিবর্তন নেই। সাফওয়ানের জন্মের পর মা মির্জা ফাতেহা বেগমের অশ্রয়-প্রশ্রয়ে শারমিন হয়ে উঠে আরও বেপরোয়া। এর প্রতিবাদী হবার কারণে শ্বাশুরী মির্জা ফাতেহা বেগমের সাথেও শামিমের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ বেপরোয়া ও স্বেচ্ছাচারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তাদের মধ্যকার দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শারমিনের দুই ভাইকে নিয়ে মা মির্জা ফাতেহা বেগম নিজে মৌলভীভাজারস্থ শামিমের বাসায় গিয়ে শিশুপুত্রসহ শারমিনকে শ্রীমঙ্গলস্থ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনুষ্ঠিত সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামীম তার শিশুপুত্রসহ শারমিনকে তার নিজ গৃহে আনতে গেলে শারমিনের মা মির্জা ফাতেহা বেগম, পিতা আব্দুস সহিদ ও চাচাতো ভগ্নীপতি আফজাল হক নতুন শর্ত মোতাবেক শামিমকে একতরফা মুচলেকা পত্র প্রদান করতে বলেন। সালিশে এমন কোন সিদ্ধান্ত ছিলনা জানিয়ে প্রতিবাদ মুচলেকা পত্র প্রদানে অসম্মতি প্রকাশ করায় শামিম লাঞ্চিত হয়ে শুন্য হাতে ফিরে আসেন। এরপর শারমিন বাদী হয়ে শামিমের সাথে বিবাহ ভঙ্গ এবং দেনমোহর ও খোরপোষের দাবীতে শ্রীমঙ্গল পারিবারিক জজ আদালতে (পারিবারিক নং- ১২/২০১৩) মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার দীর্ঘ শুনানী শেষে আদালত গত ২০ মে ২০১৫ইং দু’তরফা সুত্রে বিবাদীর বিরুদ্ধে বিনা খরচে আংশিক ডিক্রী প্রদান করেন। এর পেক্ষিতে শামিম উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাচ্ছেন। শারমিনের দায়েরী মামলা চলমান অবস্থায়ও সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে উভয় পরিবারের মধ্যে আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে শামিম-শারমিনের দাম্পত্য পুণঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বার বার চেষ্টা এবং একাধিক সালিশে মধ্যস্থতা করেছেন- শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও শারমিনের চাচাতো ভগ্নীপতি আফজাল হক, শ্রীমঙ্গল জাতীয়পার্টির নেতা কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, দেওয়ান আহমদ, একাটুনা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, গিয়াসনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, কদুপুর গ্রামের মিলাদ তালুকদার, আব্দুল মুহিদ, দুলাল আহমদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। পরিবারের দন্ডমুন্ডের কর্তা মির্জা ফাতেহা বেগম এতটাই পাষন্ড যে- শামিমকে তার পুত্রসন্তান সাফওয়ানের সাথে দেখা করতে পর্যন্ত দিচ্ছেননা। গত ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর শামিম শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর এ ব্যাপারে আবেদন করেন। সর্বশেষ আদালতের মাধ্যমে পুত্রসন্তান সাফওয়ানের নিরাপত্তা এবং তার সাথে সাক্ষাতের আবেদন করলে আদালত তার পুত্র সন্তানকে দেখার তারিখ ধার্য করেন। সে মোতাবেক গত ১৮/০৮/১৪ইং খাদ্যসামগ্রীসহ মূল্যবান কাপড়-চোপড় নিয়ে পুত্রসন্তানের সাথে দেখা করতে আদালতে উপস্থিত হলে শারমিনের স্ত্রৈন পিতা ও ভাইসহ কতিপয় লোক শামিমকে অক্রমন করার চেষ্টা চালায় এবং পরদিন ১৯/০৮/২০১৪ইং রাত সাড়ে ৯টায় মোবাইল ফোনে প্রাননাশের হুমকি প্রদান করায় শামিম মৌলভীবাজার মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী (নং-১৪৪৮, তারিখ ঃ ৩১/০৮/২০১৪ইং) করলে, বিজ্ঞ আদালদের নির্দেশে পুলিশ (নন এফ.আই.আর নং- ১১০/১৪ইং, তারিখঃ ১৫/১০/১৪ইং) মামলা দাখিল করে- যা বর্তমানে বিচারাধীন। শামিম-শারমিনের দাম্পত্য বিরোধ সম্পর্কে এবং বার বার চেষ্টা সত্তেও বিষয়টি আপোষ-নিষ্পত্তি না হবার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও শারমিনের চাচাতো ভগ্নীপতি আফজাল হক, শ্রীমঙ্গল জাতীয়পার্টির নেতা কামাল হোসেন, ও মৌলভীবাজারের দেওয়ান আহমদ যা জানালেন, সংক্ষেপে তা হচ্ছে- সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেও শারমিন কোনভাবেই শামিমের সাথে আর দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনে রাজী না হওয়ায় সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এভাবেই- শুধুমাত্র মায়ের জেদের কারণেই শেষপর্যন্ত স্বামীকে ত্যাগ ও একমাত্র পুত্রকে পিতৃহীন করলেন শ্রীমঙ্গলের শারমিন