বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অস্থিরতা!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ চুক্তিভিত্তিতে সাধারণ ও নিয়মিত পদ ব্যতীত অন্য পদে বিশেষজ্ঞ নিয়োগে আপত্তি নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুদ্ধ কর্মকর্তাদের। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাব্যবস্থপক থেকে এর নিচের পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ নিয়েই তাদের আপত্তি, যেমনটি আগে ঘটেছে। তাদের আশঙ্কা, এ ধরনের নিয়োগের কারণে ব্যাংকের নিয়মিত কর্মীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি এবং যথাযথ মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কয়েন-নোট পরীক্ষক থেকে শুরু করে মহাব্যবস্থাপক পর্যন্ত পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির কারণে যোগ্য ব্যক্তিদের তুলনায় অযোগ্যরাই বেশি কাজ পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের কোনো লাভ তো হয়নি উলটো নিয়মিত কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ জনকে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তার অভিযোগ, এসব ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির কারণে অডিট এবং এসএমই’র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের মতো নিয়মিত পদে অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগে দেয়া হয়েছে এবং চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যার কারণে যোগ্যতা থাকার পরও ওসব পদে ব্যাংকের নিয়মিত কর্মীরা পদোন্নতি পাননি।
একই কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটেও (বিএফআইইউ) এক অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিতে মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগের পাঁয়তারা চলছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ব্যাংকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে এক চিকিৎসকের চাকরির মেয়ার শেষ হওয়া পরও মহাব্যবস্থাপক পদে একাধিকবার চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ বয়সের ভারে ঠিকমত অফিস করাটাই তার জন্য দায় হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাংকের অন্যান্য নিয়মিত চিকিৎসকরা পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছে।
আরেক কর্মকর্তা জানান, শতাধিক ব্যক্তিকে কয়েন-নোট পরীক্ষক পদেও চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। রবিবারের বোর্ড সভায় এসব কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। এখন তারা নিয়মিত কর্মীদের মতোই পদোন্নতি পাবেন।
তার অভিযোগ, এসব ব্যক্তিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের কারণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ এখন তারা নিয়োগ পরীক্ষার বৈতরণী পেরিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মতোই সুবিধা ভোগ করবেন।
এছাড়া একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কর্মীদের বেশি সুযোগ দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জানান, এসব কারণেই ব্যাংকের বর্তমান কর্মীরা নিজেদের বঞ্চিত বলে মনে করছেন। যার ফলশ্রুতিতে রবিবার বোর্ড সভার আগে গভর্নর ভবনের সামনে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিএফআইইউর সাবেক জিএম দেবপ্রসাদ দেবনাথের চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ নিয়ে দুই দিন ধরে তোলপাড় চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে বিক্ষোভ করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২১ কর্মকর্তাকে চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বিক্ষোভের কারণে ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বিক্ষুদ্ধ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া নিয়ে তারাও চিন্তিত। কিন্তু একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাদের বঞ্চিত করাকেও মেনে নিতে পারছেন না তারা।
এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের প্রয়োজনে চুক্তি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যান্য নিয়মিত পদে নিয়োগ দিলে আমরাই নিজেদের অধিকার বঞ্চিত হবো। এতে পদোন্নতি আটকে যাবে। যার কারণে ব্যাংকের কর্মীরা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে ব্যাংকের কাজ শ্লথ হয়ে এলে তাতে ভাবমূর্তি আরও বেশি ক্ষুণ্ন হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালন ম. মাহফুজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।