এবার সিলেট বিআরটিএ অফিসে ডিজিটাল প্রতারণা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ফের আপাদমস্তক দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত সিলেট বিআরটিএ। ঘুষখোর কর্মকর্তা আর দালালদের দৌরাত্ম আবারো অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের নামে ডিজিটাল প্রতারনা। একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ঘুষখোর কর্মকর্তা আর দালালরা লুটেপুটে খাচ্ছে সিলেট বিআরটিএ অফিস । এখানে সেবাগ্রহীতার চেয়ে দালালের সংখ্যা অনেক বেশী। কিছেু দিন আগেও সিলেট ভ্রাম্যমান আদালত একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩জন দালাল ও তাদের সহযোগী এক কর্মচারীকে আটক করে আর্থিক জরিমানা করে। কিন্তু অভিযানের পরদিন থেকেই আবার সেই একই অবস্থা সিলেট বিআরটিএ‘র।
নগরীর শিবগঞ্জের লিলু মিয়া জানান, ২০১৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তার নিজ সিএনজি অটোরিক্সার (সিলেট-থ-১২-৪১৫৪) ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের জন্য আবেদন করেন। নানা অজুহাতে প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হয়। তিনি গত ২৪শে মে সিলেট বিআরটিএ অফিসের ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক এর নিকট যান। তখন কম্পিউটারে চেক করে ওমর ফারুক বলেন নাম্বার প্লেইট এসছে, সিএনজিতে গ্রিল লাগিয়ে এনে গাড়ী দেখাতে হবে নতুবা নাম্বার প্লেইট দেওয়ার আইন নেই। তখন লিলু মিয়া গাড়ি নিয়ে এসেছেন জানালে ওমর ফারুক ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের (কোম্পানির) প্রতিনিধি জীবন কে গাড়ি পরিদর্শনের জন্য পাঠান। তখন বেলা ১টা ৪০ মিনিট (কোম্পানির) প্রতিনিধি জীবন গাড়ী দেখে জানায়, গাড়ীতে গ্রীল লাগানো হয়নি এবং গাড়ীর চেসিস নাম্বার সঠিক নয়। একথা শুনে ওমর ফারুক বলেন সিএনজিতে গ্রিল নেই এবং চেসিস নাম্বারও সঠিক না তাই ৩০০০( তিন হাজার) টাকা ঘুষ দিলে নাম্বার প্লেইট দেওয়া যাবে নতুবা দেওয়া যাবে না। অনেক দরকষাকষির একপর্যায়ে ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০০০ ( দুই হাজার ) টাকা ঘুষের বিনিময়ে ঐ দিন বিকাল ৪ ঘটিকার সময় লিলু মিয়াকে ডিজিটাল নাম্বার প্লেইট দেওয়া হয়। এরকম হাজারো লিলু মিয়া প্রতিদিন সিলেট বিআরটি এর ঘুষখোর কর্মকর্তা ও দালালদের প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। ছোট খাটো নানা অসংঙ্গতি ও আইনের ফাকঁ ফোকরকে পুজিঁ করে হর-হামেশা এমন ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ড্রাইভিংলাইসেন্স এর ডিজিটাল লার্নার দেওয়ার কথা বলে বিআরটিএ‘র এম.এল.এস.এস ঋতু আক্তার চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারনা। প্রতিটি লার্নার কার্ড হতে ৫০০(পাচঁ শত) টাকা হতে ১০০০(একহাজার) টাকা পর্যন্ত আদায় করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এম.এল.এস.এস ঋতু আক্তারকে টাকা না দিলে মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও লার্নার কার্ড পাওয়া যায় না।
এদিকে সিএনজিতে গ্রিল ছাড়া ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হবে না – এমন ঘোষণা থাকলেও নগরীতে চলাচলকারী কোনো সিএনজিতেই গ্রিল নেই। জায়গামত অর্থ দিয়েই আইন অমান্য করেও নগরীতে দিব্যি চলাচল করছে ২০ হাজার বৈধ সিএনজি। এর বাইরে অবৈধ সিএনজির কোনো হিসেবে ট্রাফিক পুলিশ বা বিআরটি এর কাছে নেই। সংশ্লিষ্টদের দাবি, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে আরও বিশ হাজার । এই চল্লিশ হাজার সিএনজি থেকেই আইনের দোহাই দিয়ে উৎকোচ নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ। রাস্তা থেকে নেয় ট্রাফিক পুলিশ আর ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্র সঠিক করার নামে এসব সিএনজি থেকে উৎকোচ আদায় করে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তারা। এসব বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব কার এমন প্রশ্নে বিআরটিএ‘র একজন কর্মকর্তা বলেন ,আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ট্রাফিক পুলিশই তা দেখবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা গোয়াইনঘাটের বাসিন্দা এরশাদ আলী জানান, গত চার মাস পূর্বে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন জমা দেন। কিন্তু আজ অবধি লাইসেন্স পাননি। নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বন কলাপাড়ার বাসিন্ধা এনামূল হক জাবেদ, নিজাম, নারায়ণ, টুলটিকর এলাকার ছাত্তার মিয়া,একই এলাকার মাহিন, রুহেল, আজাদ , জয়নাল আবেদিন , মনসুর , আহমদসহ প্রায় অর্ধশতাধীক দালাল চক্র বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত এরা সকলেই বিয়ারটিএ অফিসের কোন না কোন কর্মকর্তার নিধার্রীত দালাল। এদের কাজ হচ্ছে সিলেটের যে সকল এলাকা থেকে সিএনজি ফিটনেস পরীক্ষা করতে কিংবা নতুন মোটর সাইকেলের কাগজ করতে আসা ব্যাক্তিদের সাথে কণ্টাকে কাজ করে দেওয়া অথবা যে সকল সিএনজির গ্রিল নেই সে সকল সিএনজি বিয়ারটিএ অফিসে কাগজপত্র যাচাই কিংবা কাগজ নেই তা করে করে দেওয়া। কারণ অফিসের ভিতরে বড়কর্তারা তাদেরকে দালাল হিসাবে নিয়োগ করে রেখেছেন। এ ফাঁকে বড়কর্তাদের পকেটে ঢুকে বড় অংকের কাঁচা টাকা। এভাবে বিভিন্ন রকম মটর যানের জন্য রয়েছে পৃথক দালাল চক্র। এ অফিসের কর্মকর্তা মনু ,সহ সকল কর্মকর্তারাই এসব দালালদের নিয়োগ করে থাকেন। গত কাল স্বরজমিন ঘুরে দেখা যায় , ২০৯ নং কক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনেই উনার অফিসে ঢুকে ১০/১৫ জন দালাল ফাইল খোজে নিজ কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছ। ঘুষ গ্রহনের ব্যাপারে বিআরটি এর সহকারী পরিচালক এনায়েত হুসেন মন্টু জানান, বিষয়টি আমার জানানেই। কারও বিরোদ্ধে এরকম অভিযোগ পাওয়াগেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কথা প্রসঙ্গে বিআরটিএ অফিসের ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, প্রায় ৪০ হাজার ডিজিটাল নাম্বার প্লেইট বিতরনের অপেক্ষায় নানা অসংঙ্গতির জন্য বিতরন করা যাচ্ছে না। তবে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি ডিজিটাল নাম্বার প্লেইটের (কোম্পানির) প্রতিনিধি জীবন নিতে পারে বলে তিনি জানান। (চলবে)