এতিমদের সাথে এ কেমন ভণ্ডামি পল্লীবন্ধুর!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আঙ্গুর, মালটা, বেদানা। আরো আছে রাজশাহীর সুস্বাদু আম। ভিন্ন ভিন্ন থালায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব ফলমূল। যেন উপচে পড়ছে! যে টেবিলে এসব ফলমূল রাখা হয়েছে তার পাশে পাতানো কুশন চেয়ারে বসে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশে পুত্র এরিক আর পার্টির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
শুক্রবার প্রথম রোজায় ইফতার আয়োজন ছিল এরকমই। মিরপুর সেকশন-৯ এ একটি মাদরাসার মসজিদ কমপ্লেক্স উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ইফতারি।
ফতারের বরকত থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হতে চান না জাপা চেয়ারম্যান। এ জন্যই এতিমদের সঙ্গে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতিমদের সাথেও তিনিও ইফতারি করবেন।
কিন্তু শেষ অবধি তেমনটি আর ঘটলো না। এরশাদ বসলেন আলাদা টেবিলে। ইফতারিতে খেলেন ফলমূল। অন্য অতিথিরাও বসলেন তার সঙ্গেই। তাদেরও দেয়া হলো ফলমূল।
আর এতিমদের জন্য শুধু রইলো তেহারির প্যাকেট। সারাদিন রোজা থেকে শুষ্ক মুখ ও গলায় কোঁৎ মেরে তেহারি গিলছে এতিমরা। আর সামনে বসা এরশাদ আর তার সঙ্গীরা আয়েশ করে খাচ্ছেন ফলমূল। অথচ ‘পল্লীবন্ধু’ এই মাতৃ-পিতৃহারা শিশুগুলোর সাথে ইফতার করতে চেয়েছিলেন।
রোজায় সাধারণত তেল জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আয়োজক কমিটি শুধু তেহারি দিয়ে এতিম শিশুদের ইফতারির আয়োজন করে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টিকে চরম বৈষম্যমূলক বলে বর্ণনা করেছেন ওই মাদরাসারই একজন শিক্ষক।
তিনি বলেন, ‘এরশাদ একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হয়ে কীভাবে বাবা-মা হারানো এতিমদের সামনে রেখে ফলমূল দিয়ে ইফতারি করতে পারলেন?’
তবে কী কারণে শিশুদের ফল দেয়া হয়নি তার কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
এই ইফতার আয়োজনে অতিথিদের বসার স্থানে এরশাদের বামে ছিলেন পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও ডানে পুত্র এরিক এরশাদ। এছাড়া ওই মাদরাসা কমিটির ও জাপার নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
ইফতারের আগ মুহূর্তে এরশাদ বলেন, ‘আজ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তা নেই পুরুষের, নেই নারীর। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা দরকার কিন্তু সেটাও নেই।’
সরকারকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ পেটের ক্ষিধা মেটাতে না পেরেই সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশ যেতে বাধ্য হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করুন। যেন মানুষ আর বিদেশ যেতে বাধ্য না হয়। আর যেন মানুষ পাচার না হয়।’
বক্তব্যের সময় তিনি দেশ, ইসলাম ও এতিমদের রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন জানান।