আপিলের রায়: বুদ্ধিজীবী হত্যায় ফাঁসি, সিরাজুদ্দীন হত্যায় খালাস
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিলের রায়ে একটি অভিযোগে তাকে ফাঁসি এবং অন্য একটিতে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, চার বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় হয়েছে।
রায়ে ৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। ফলে বুদ্ধিজীবী হত্যায় এই প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড আপিলে বহাল থাকল। তবে ১ নম্বর অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যার দায়ে থেকে আপিল মামলার রায়ে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনালেএ অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছিল।
অন্যদিকে ৭ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার দায়ে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ ১ ও ৬ নম্বর অভিযোগকে আলাদা করেই চূড়ান্ত রায়টি দিয়েছে।
৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। প্রমাণিত না হওয়ায় ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যনালের রায়ে খালাস পান মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একমত হয়ে এ চার অভিযোগে আগের রায়ই বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
নিয়ম অনুযায়ী, এখন আপিলের রায় ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষ রিভিউ করার কথা জানিয়েছে।
চতুর্থ রায়
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত হওয়া ১৯টি মামলার রায়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩টিতে দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আবুল কালাম আযাদ, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান এবং ফরিদপুরের জাহিদ হোসেন খোকন পলাতক থাকায় এ সুযোগ পাননি।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারও একই কারণে আপিল করতে পারেননি। আপিল বিভাগে এ নিয়ে চারটি মামলার নিষ্পত্তি হলো। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজা দিলে চলতি বছর ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তার ঠিক এক বছর আগে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
আপিল শুনানি চলাকালেই মৃত্যু হয়েছে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল মঙ্গলবার আদালতের কার্যতালিকায় আসে।