সিরিয়ায় যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত আরও ১৫-২০ বাংলাদেশি
আইএস জঙ্গি আমিনুলের চাঞ্চল্যকর তথ্য
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বিশ্বখ্যাত কোমল পানীয় কোম্পানি কোকাকোলার বাংলাদেশের আইটি বিভাগের চিফ আমিনুল ইসলাম বেগ, যিনি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন। আমিনুল জানিয়েছেন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধ করছেন বাংলাদেশি দুই যুবক। আরও ১৫-২০ জন যুবক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। এদের বেশির ভাগই প্রকৌশলী। উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী এসব তরুণ-যুবক তলে তলে সংগঠিত হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর একটি দলের সমন্বয়কারী সন্দেহে গ্রেপ্তার করা কম্পিউটার প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বেগ গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানান।
আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গত রোববার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে আমিনুল ইসলাম ও সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে একটি ইসলামী স্কুলের প্রধান সাকিব বিন কামালকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বইপত্র, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহাদত হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ছোট আকারের দল করে কিছু যুবক আইএস-এর পক্ষে ইরাকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমিনুল ইসলাম এ রকম একটি দলের প্রধান বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের ভেতরে এ রকম আরও অনেক দল আছে বলে তিনি মনে করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। কথাবার্তায় কোনো রাখঢাক নেই। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, ইরাকে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশি যুবক গাজী সোহাগ ও মো. নজিবুল্লাহ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে।
দুই যুবকের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকৌশলী গাজী সোহাগ দুই মাস আগে এবং মেরিন প্রকৌশলী নজিবুল্লাহ তিন মাস আগে ঢাকা ছাড়েন। তবে এঁদের বিস্তারিত আর কোনো তথ্য হাতে পায়নি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে, গাজী সোহাগের বাড়ি ফরিদপুরে আর নজিবুল্লাহর বাড়ি উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলায়। আরও যেসব যুবক যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাদের কয়েক জনের নামও জানিয়েছেন আমিনুল। এঁরা হলেন আতিক সরকার, সিফাত, মো. আবদুল্লাহ ও জাভেদ কায়সার।
আমিনুলের ভাষ্যমতে, ২০১৩ সালে তিনি আইএস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করেন যে এ ধরনের যুদ্ধে যাওয়া তাঁর ঈমানি দায়িত্ব। এরপর তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন। কিছুদিন আগে জাপানে বসবাসরত সাইফুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। তিনি ইরাকে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে রাজি হন। তবে সিরিয়া হয়ে, না তুরস্ক হয়ে তাঁরা যাবেন তা এখনো ঠিক করা হয়নি। নিজেদের যোগাযোগের জন্য তাঁরা বিশেষ একটি মাধ্যম ব্যবহার করেন। এ মাধ্যমে ৬ মিনিট পর পর ডাটাগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় কম্পিউটার সায়েন্স এবং আইটি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশের একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি, ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানি, কোমলপানীয় কোম্পানি কোকাকোলার আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বাবার নাম শহিদুল ইসলাম, বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বালাকড়ে। আমিন বেগের অন্যতম সহযোগী আশরার আহমেদ খান চৌধুরী গত মার্চে গ্রেপ্তার হন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া সাকিব বিন কামাল লালমাটিয়ায় ‘দা ফ্রনটিসটেরি স্কুল’ নামে একটি ইসলামি স্কুল পরিচালনা করেন। যে বাড়িটিতে স্কুলটির অবস্থান তার উপরের তলায় থাকেন তাঁর শাশুড়ি। সাকিবের আদিবাস চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট উপজেলার মৌলভীপাড়ার খাজা রোডে। বাবার নাম আখতার কামাল।