সিলেট সদরের ৮ ইউপিতে ভোটযুদ্ধ মঙ্গলবার থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা

11 copyনুরুল হক শিপু :: দুদিন পর আগামী মঙ্গলবার সিলেট সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নির্বাচন নির্বিঘœ করতে ৯৫টি ভোটকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সাথে ব্যাপক নিরাপত্তার বলয় তৈরি করেছে মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে থাকবে দেড় সহা¯্রাধিক পুলিশ সদস্য। তাদেরকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সহযোগিতা করবেন র‌্যাব-৯ ও বিজিবি সদস্যরা। এছাড়া প্রতি ৩টি কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিেেস্ট্রটের নেতৃত্বে থাকবে ১টি করে মোবাইল টিম, পুরো উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট। গোয়েন্দা টিমের মধ্যে থাকবে, মহানগর পুলিশের নগর বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) টিম ও র‌্যাবের গোয়েন্দা টিমসহ একাধিক সংস্থা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন সবুজ সিলেটকে জানান, ‘আমরা নির্বাচন নির্বিঘœ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সদর উপজেলা কর্মকর্তাকে আমাদের সকল নির্দেশনা জানিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সবকিছু বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’
এদিকে, দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের তালিকায় সিলেট বিভাগের সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ছাড়া আর কোনো স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মঙ্গলবার ওই ৮ ইউনিয়নে ৯৫টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৫৩০ জন প্রার্থী ওই দিন ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে ৮০ জন চেয়ারম্যান, ৩৫৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৯১ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ৮ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭০ জন।
আর শেষ সময়ে নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। ৮টি ইউনিয়নই প্রচার-প্রচারণা পুরোপুরি জমে ওঠেছে। গত ৩ মার্চ প্রতীক পাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নেমেছেন মাঠে। ভোটারদের যেখানেই পাচ্ছেন সেখানেই হাত মেলাচ্ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। একদিকে প্রার্থীরা ব্যস্ত ভোটারদের মন জয় করতে আর অপরদিকে ভোটাররা রয়েছেন যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ৮ ইউনিয়নে ৫৩০ জন প্রার্থী মুখোমুখি হচ্ছেন ২২ মার্চ। এর মধ্যে ৪০ জন চেয়ারম্যান, ৩৫৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৯১ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য রয়েছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৮ ইউনিয়নেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি একটি ইউনিয়নে তাদের প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া অন্যান্যদলসহ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে ২৩ জন অংশ নিচ্ছেন।
টুলটিকর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আবদুল মছব্বির (আ.লীগ), কাজী মুহিবুর রহমান (বিএনপি), এসএম আলী হোসেন (স্বতন্ত্র-আ.লীগ বিদ্রোহী), লুৎফুর রহমান (স্বতন্ত্র)।
খাদিমপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন,, নজরুল ইসলাম বেলাল (আ.লীগ), মো. ফারুক আহমদ (বিএনপি), সেলিম আহমদ (জাপা), হাফিজ শরীফ আহমদ (ইসলামী আন্দোলন), মো. আফছার আহমদ (স্বতন্ত্র-আ.লীগ বিদ্রোহী), মোজাম্মিল হোসেন লিটন (স্বতন্ত্র), মুফতি মাওলানা মো. জাকারিয়া (স্বতন্ত্র) ও ফজলুল হক (স্বতন্ত্র)।
খাদিমনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা মিয়া (আ.লীগ), ইলিয়াস আলী (বিএনপি), ডা. বাবুল আহমদ (স্বতন্ত্র), সিরাজুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)। মোগলগাঁও ইউনিয়নে হিরন মিয়া (আ.লীগ), মাসুদ মিয়া (বিএনপি), নাজির উদ্দিন (স্বতন্ত্র), শামসুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)।
জালালাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আশরাফ আলী (আ.লীগ), ইসলাম উদ্দিন (বিএনপি), মনফর আলী (স্বতন্ত্র), ফয়সল আহমদ তারা মিয়া (স্বতন্ত্র), আতিকুর রহমান (স্বতন্ত্র)।
হাটখোলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, খুর্শিদ আহমদ (আ.লীগ), আজির উদ্দিন (বিএনপি), চাঁন মিয়া (স্বতন্ত্র), রহমত উল্লাহ (স্বতন্ত্র), শাকিব জামান (স্বতন্ত্র), শামস উদ্দিন (স্বতন্ত্র), মো. রফিকুজ্জামান (স্বতন্ত্র)। কান্দিগাঁও ইউনিয়নে নিজাম উদ্দিন (আ.লীগ), আহমদ আলী (বিএনপি), আবদুল মনাফ (স্বতন্ত্র), আবদুল মতিন সামাদ (স্বতন্ত্র), সাজ্জাদ মিয়া (স্বতন্ত্র)।
টুকেরবাজার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আলতাফ হোসেন (আ.লীগ), শহীদ আহমদ (বিএনপি), দেলোয়ার হোসেন (স্বতন্ত্র)।
সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স, কেন্দ্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের জন্য যাবতীয় সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। এখন শুধু নির্বাচনের দিনটির অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ খুব শান্তিপ্রিয় ও ভালো; তাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণই হবে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেড় সহ¯্রাধিক পুলিশের সাথে র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নগর পুলিশের গোয়েন্দা টিমের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়; পুলিশ লাইনে একটি রিজার্ভ টিম প্রস্তুত থাকবে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও আমাদের সহযোগিতায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ৮টি ইউনিয়ন এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে। চার স্তরের নিরাপত্তার বলয় ইতোমধ্যে আমরা গড়ে তুলেছি। আশা করছি, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ বলে কোনো কেন্দ্র নেই। তবে ৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৫০টি।’
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানজিদা আফরিন সন্ধ্যা জানান, ‘আমাদেরকে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও প্রস্তুত। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক মোবাইল টিম মাঠে রয়েছে। তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরদারি করছেন। তবে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যার খবর আমরা পাইনি। আশা করি, নির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে।’