বিয়ানীবাজার-বড়লেখা-জুড়ী ও কুলাউড়াবাসীর আবার ঘুম ভাঙ্গাবে লাতুর ট্রেন

একনেকে ৬৭৮ কোটি টাকায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন প্রকল্প অনুমোদন

images-11সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজারবাসীর আবার ঘুম ভাঙ্গাবে লাতুর ট্রেন। এ কথাগুলো এখন বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) ৬৭৮ কোটি টাকায় অনুমোদনের সংবাদে আনন্দের বন্যায় ভাসছে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। ৬৭৮ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন এমপিকে অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় পৌর শহরে আনন্দ মিছিল করে বড়লেখা উপজেলা আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন। মিছিলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। মিছিল পরবর্তী পথসভায় পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল আহাদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি কামরান চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর তাজ উদ্দিন, জেহীন সিদ্দিকী, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সালেহ আহমদ জুয়েল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানিমুল ইসলাম তানিম, সম্পাদক সাহেদুল ইসলাম, পৌর সভাপতি ছিদ্রাতুল কাদির আবির, সম্পাদক রেহান পারভেজ রিপন, কলেজ সভাপতি ইমরান হোসেন, সম্পাদক আব্দুর রব বাবু প্রমূখ। পথসভা শেষে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো: শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, চার উপজেলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল রেল লাইনটি চালু করার। জনগণের বহুল কাক্সিকত রেল লাইনটি একনেকে অনুমোদন হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৭ জুলাই বিএনপি জোট সরকার কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পথে ঘন ঘন ট্রেন দূর্ঘটনা, কাঠের স্লিপারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় লোকসান সহ নানা কারণ দেখিয়ে। ফলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে। রেললাইনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় আর উদাসীনতায় এ রেল লাইনটি অরক্ষিত থাকায় রেল লাইনের কোটি কোটি টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি, রেল স্লিপার, রেল লাইনের পাথর সহ মূল্যবান জিনিসপত্র লোপাট চলছে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইনের পাশে রেলওয়ের ভূমির বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলে পাকা ঘর নির্মাণ সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছে ভূমি খেকো চক্র। এছাড়া রেলের অনেক ভূমি অবৈধ দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। এ পথে ট্রেনটি পুণরায় চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘটন বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচী পালন করে। আন্দোলন কর্মসূচীর সাথে একত্মতা ঘোষণা করে নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের জন্য সংসদে রেল লাইনটি চালু হওয়ার জন্য জোরালো ভূমিকা রাখেন মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন। এরপর গত ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর আর প্রকল্পটির কোনো কাজই হয়নি।
এরপর ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরকালে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মো: শাহাব উদ্দিন রেল লাইন চালুর দাবি জানান। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে রেল লাইন চালুর ঘোষণা দেন। অবশেষে গতকাল ২৬ মে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) ৬৭৮ কোটি টাকায় অনুমোদন হওয়ার সংবাদে আনন্দের বন্যায় ভাসতে থাকে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, এ পথে পুনরায় ট্রেন চালু হওয়ার একান্ত কষ্টের ফসল আমাদের জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ আলহাজ্ব মো: শাহাব উদ্দিন এমপির। এ সেকশনে ট্রেনটি চলাচল শুরু হলে ১৮টি চা বাগানসহ বৃহত্তর বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি পণ্য আমদানী ও যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সরকার রেলওয়ের বেহাত হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করতে পারবে। এ রেলপথটি চালু হলে জ্বলে উঠবে সিগনাল। সচল হবে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর রেলষ্টেশন। আবারও ঘুম ভাঙ্গাবে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসীর। মানুষ চায়-এসব ষ্টেশন আবার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠুক। নতুন করে চালু হোক বন্ধ হওয়া লাতুর ট্রেন। এমনটাই প্রত্যাশা এখন সবার।