সুবিদবাজারে ব্যাংক কর্মকর্তা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে খুন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়ায় জঙ্গি সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হয়েছেন অনন্ত বিজয় দাশ নামেরএক ব্যাংক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১২ মে) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অনন্ত বিজয় দাশ তাঁর কর্মস্থল পুবালী ব্যংকে যাওয়ার পথে বাসা থেকে কয়েকশ’ মিটার অদূরে সন্ত্রাসীরা তাঁর মাথায় এলোপাথাড়ি কুপাতে থাকলে ঘটনাস্থলে মগজ ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রান হারান।
জানা যায় অনন্ত বিজয় দাশ সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে আসা মাত্র চার জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি মেইন রোড থেকে সুবিদবাজার তার বাসার দিকে দৌঁড় দেন। তবে বেশি দূর তিনি যেতে পারেনি। নূরানি দিঘিরপাড় এলাকায় যাওয়ার পর তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী ওই চার সন্ত্রাসী।
ঘটনার পর স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনন্তকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনন্ত বিজয় দাশ সুবিদবাজার নূরানি ১৩/২ নম্বর বাসায় থাকতেন। তার বাবার নাম রবীন্দ্র কুমার দাশ। পূবালী ব্যাংক জাউয়া বাজার শাখার কর্মকর্তা ছিলেন অনন্ত। তিনি সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক,বিজ্ঞান লেখক, মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।
মুক্তমনা ব্লগার হওয়ায় একাধিকবার তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মৌলবাদীরা টার্গেট করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তার সহযোগীরা দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে বরাত দিয়ে একজন পথচারী জানান, খুনিরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর এলাকা ত্যাগ করে। তাঁর মাথার পেছন, পাশ দিক এবং ঘাড়ে একাধিক কোপের আঘাত রয়েছে। অনন্ত বিজয় দাশের বড় বোন পঞ্চ তপাদার বলেন, ‘আজ সকালে পূবালী ব্যাংকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অনন্ত বাসা থেকে রওনা দেয়। হঠাৎ করে আমরা খবর পাই তাকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করেছে এবং তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরাও হাসপাতালে ছুটে যাই।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্লাহ জানান, সকালে অনন্ত সুবিদ বাজার এলাকায় তাঁর বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অনন্তকে গুরুতর জখম করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
অনন্ত বিজয় দাশ ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ক ছোট কাগজ ‘যুক্তি’ সম্পাদক। তাঁর লিখিত বিজ্ঞানভিত্তিক একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেঙ্কো অধ্যায়’, ‘জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ’, ‘ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা’।
এদিকে, অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকাণ্ডের পর সিলেটের স্থানীয় ব্লগার ও এক্টিভিস্টরা ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে তাৎক্ষণিকভাবে এক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষোভ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তারা অভিযোগ করে বলেন- একের পর এক মুক্তমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোকদের হত্যার পরও প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই। অভিজিৎ রায়, ওয়াশীকুর বাবুকে যে কায়দায় হত্যা করা হয়েছে ঠিক একইভাবে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বে যদি হত্যাকারীরা শাস্তি পেত তাহলে এভাবে অনন্ত বিজয়কে খুন হতে হতো না। তারা অবিলম্বে অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, অনন্ত বিজয় দাশ দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন মৌলবাদী জঙ্গি সন্ত্রাসীদের টার্গেট। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত জঙ্গিদের হিটলিস্ট তাঁর নাম ছিল বলে জানা যায়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে তিনি মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে কুপিয়ে জখম করে শত শত মানুষ ও পুলিশের সামনেই পালিয়ে যায় খুনিরা। গত ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি রাতে একইভাবে কুপিয়ে আহত করা হয় আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে।