আইনী লড়াইয়ে হেরে গিয়ে ভুমিখেকো লিলু চক্র নানা অপপ্রচার শুরু করেছে

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথপুরের মেহেরুন নেছা

IMG_0968 copyসুরমা টাইমস ডেস্কঃ জগন্নাথপুরের ৫ গ্রামবাসীর জমি দখলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জগন্নাথপুর উপজেলার হাবিবুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মেহেরুন নেছা খাতুন। গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের একটি হোটেলে জেলা প্রেসকাবের অধিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘আমার স্বামী মরহুম আছাব আলী কখনো কারও জমি দখল করেননি। বরং আমার স্বামীর দখল করা জমি দখলে নিতে আইনী লড়াইয়ে হেরে গিয়ে নানা অপপ্রচার রটাচ্ছে। তারা দাবি করেছে তাদের সঙ্গে ৫ গ্রামের মানুষ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কয়েকজন ভুমিখেকো চক্র গ্রামবাসীর নামে অপপ্রচার রটিয়ে জমি দখলে নিতে নানা তৎপরতা শুরু করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মরহুম আছাব আলী জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের দু’বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি ও শালিস ব্যক্তিত্ত হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এখন মৃত আছাব উদ্দিনের জমি দখলে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন একই এলাকার শফিকুর রহমান লিলু নামে একজন চিহ্নিত প্রতারক ও ভূমিখেকো। গত ৩ মে সংবাদ সম্মেলন করে ৫ টি গ্রাম বাসীর নাম ব্যবহার করে সস্তা সহানুভুতি পেতে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার কতিপয় মানুষের নিকট থেকে চাদাঁ তুলে তাদেরকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন।
জমিন প্রকৃত বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার ইকড়ছই মৌজার জেএল নং ১৭২, এসএ দাগ নং ৬৮৫, হাল দাগ নং ৬৪৯, ৯২৯, ৬৬০, ডিপি খতিয়ান নং ২৩, ২৭, ২৮, ৮৩৩, ৮৪৭, ১০৪৮। এসএ দাগ হতে সৃষ্ট হাল দাগ ৬৪৯, ৯২৯ ও ৬৬০ নং দাগে মরহুম আছাব আলীর নামের রেকর্ডকৃত ভূমির পরিমান ১৫ দশমিক ৩১ একর। পুরোটি ভুমিই খরিদা সত্ত। এই ভুমি ভিন্ন ভিন্ন দলিলে ক্রয় করা হয়। ভুমির মালিকানা নিয়ে জগন্নাথপুর সেটেলমেন্ট অফিসে শফিকুর রহমান লিলু ও সহযোগিরা মোকদ্দমা দায়ের করলে ৩১ ধারায় ২৪০ একর ভূমি কর্তন করা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে মকদ্দমা দায়ের করলে জোনাল অফিস বিষয়টি ভূমি অধিদপ্তর ঢাকায় প্রেরণ করে। ভূমি অধিদপ্তর ঢাকা ৩১ ধারায় রিভিউ প্রভিশন না থাকায় আবেদন খারিজ করে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে তারা ৩১ ধারায় প্রতারণা রেকর্ড হয়েছে মর্মে ৪২ (এ) ধারায় পুনরায় বিষয়টি তদন্ত করে বিচার করার আবেদন করলে ভূমি অধিদপ্তর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার সিলেটকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এসএ ১২১, ২৯০, ৪৩৯ নং খতিয়ানে রেকর্ডীয় মালিক জেয়াদ উল্লাহ ও নায়েম উল্লার ওয়ারিস লাল মিয়া এবং লিলুর পিতা আব্দুল্লাহ তর্কিত ৬৮৫ নং দাগের ৩৭ শতক জমি রেজিষ্ট্রি দলিল নং ৩৭৪৬, আব্দুল মন্নান ও আব্দুল মজিদের নিকট হস্তান্তর করেন। এভাবে তাদের দাবিকৃত ২৮ টি খতিয়ান বিভিন্ন মালিকের কাছে বিক্রি করেছেন। বিক্রি করার পরে ও রেকর্ড নিয়েছেন। লিলু মিয়া ও সহযোগিরা জোনাল অফিসের নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ৩০৫৬/১১-৩০৬৩/১১ নং রিট মোকদ্দমা দায়ের করেন। রিট মোকদ্দমা দুতরফা শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ আবেদনকে ডিসচার্জ করে রায় প্রদান করেন। এর ফলে জমিটি মরহুম আছাব আলীর বলে আদালতেই প্রমান হয়।
কিন্তু ভুমি খেকোচক্র ওই রায় মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীতে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল মামলা দয়ের করলে নো অর্ডার আদেশ হয়। পরবর্তীতে সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে দু’তরফা শুনানী শেষে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল রেকর্ড সংশোধন পূর্বক মাঠ পর্যায় হতে আপত্তিস্তর পর্যন্ত দখল ও সত্তের ভিত্তিতে মরহুম আছাব আলীর লোকজনের পক্ষে নামে ভূমি রেকর্ড পুনর্বহাল করার রায় প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, জোনাল অফিসার সুব্রত রায় কোনো পক্ষে অবলম্বন করে কিংবা অর্থের বিনিময়ে রায় প্রদান করেননি। শফিকুর রহমান লিলু ২০০২ সালে মরহুম আছাব আলী জীবিত থাকাকালে এই ভূমি নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং প্রকাশ্যে চাদাঁ দাবি করেছে। যা এলাকার মুরব্বিয়ান ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবগত রয়েছেন। লিলু এই ভূমি নিয়ে নানা রকম চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার মানুষের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হতিয়ে নিচ্ছে। মরহুম আছাব আলী একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া স্বত্তেও তাকে আলবদর, রাজাকার উল্লেখ করে লিলু ও তার সহযোগিরা যে অন্যায় করেছে। ফায়দা হসিলের উদ্দেশ্যে এবং প্রশাসনকে প্রভাবিত করতেই তারা এরুপ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তারা কখনও এটা প্রমান করতে পারবে না।
মেহেরুন নেছা খাতুন বলেন, ‘এ ভূমিতে মরহুম আছাব আলী ১৯৯৭ সালে রাজিব ব্রিকস ফিল্ডস নামে যে প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছিলেন তা এলাকার মানুষ জানেন। এই লিলু কিছুদিন পূর্বেও একটি মামলায় জেল খেটে বের হয়েছে। এলাকায় সে খারাপ প্রকৃতির লোক হিসেবে পরিচিত। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস সিলেট যে রায় প্রদান করেছেন সেই রায়ে আমরা ৩১ ধারায় হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। জোনাল সেটেলমেন্ট আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্টিত করেছেন।’