নেপালে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়াল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নেপালে আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতভিত্তিক সংবাদ সংস্থা টাইমস অব ইনডিয়া, আউটলুক, লাইভমিন্ট ও ফার্স্টপোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার বলে জানিয়েছে বিবিসি ও আল-জাজিরা।
এদিকে, ২৫ এপ্রিল মূল ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত নেপালে মোট ১১০টি আফটার শক বা পরাঘাত আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার কাঠমা-ুর এক ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এই ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে যাওয়া দেশটির বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষকে ভূমিকম্পপরবর্তী দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য বুধবার জাতিসংঘ ৪১ কোটি ৫০ হাজার ডলারের সহায়তা চেয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইনডিয়া
কাঠমান্ডুতে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ও সমন্বয়কারী জ্যামি ম্যাকগোল্ডরিক বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ সাড়া পাওয়া গেছে, তাতে আমি আশাবাদী। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবার কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ পেঁৗছে দেয়ার জন্য তৎপরতা জোরদার করতে হবে; বিশেষভাবে যারা প্রত্যন্ত এলাকায় আছেন, তাদের কাছে দ্রুত ত্রাণ পেঁৗছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ লাখ মানুষের জন্য ত্রিপল ও তাঁবুর ব্যবস্থা করতে, ১৪ লাখ মানুষের খাবার জোগাতে এবং ৪২ লাখ মানুষের জন্য নিরাপদ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে ৪১ কোটি ৫০ হাজার ডলার প্রয়োজন।
ভূমিকম্পে দেশটির ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০ লাখের আগামী তিন মাসের জন্য জরুরি ভিত্তিতে তাঁবু, পানি, খাবার ও ওষুধ দরকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি। জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নেপালের ৭৫টির মধ্যে ৩৯ জেলার ৭০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং আরো পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষ ঠা-া ও বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কোনোরকমভাবে তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
বুধবার থেকেই নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় ত্রাণ পেঁৗছে দেয়ার বিশেষ অভিযান শুরু হয়। তারপরও দেশটির অনেক অঞ্চলে এখনো ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। পার্বত্য এলাকা হওয়ার কারণে নেপালের অনেক জায়গায় হেলিকপ্টার অবতরণের অবস্থাও নেই। কেবলমাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে পাহাড় বেয়ে তবেই সে জায়গাগুলোয় পেঁৗছানো সম্ভব। তাই চেষ্টা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত দ্রুততায় ত্রাণ পেঁৗছানো যাচ্ছে না।
পরাঘাতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল
আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে আফটার শক বা পরাঘাতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ২৫ এপ্রিল মূল ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত নেপাল মোট ১১০টি আফটার শক আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সিংহভাগের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪-এর ওপরে। সবশেষ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২২ মিনিটে একটি পরাঘাতে কেঁপে ওঠে নেপাল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৭। উল্লেখ্য, প্রবল কোনো ভূমিকম্পের পর আক্রান্ত অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী কিছু কম্পন আঘাত হেনে থাকে। এদের আফটার শক বা পরাঘাত বলা হয়।
পাঁচ দিন পরও জীবিত উদ্ধার!
ভয়াবহ ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার কাঠমা-ুর এক ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, কাঠমা-ুর প্রান্তে অবস্থিত হিলটন গেস্ট হাউসের ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়েছিল ওই কিশোর। দেয়াল ও ছাদ ভেঙে পড়া অংশের ফাঁকে সে অবস্থান করছিল। উদ্ধারের পর ওই কিশোরকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সে ঘাড়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। এছাড়া কাঠমা-ুতেই আরেকটি উদ্ধার অভিযানে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে মঙ্গলবারও ৮০ ঘণ্টা আটকা থাকার পর ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
বোমা ফাটালেন মোদি!
নেপালের ভূমিকম্প নিয়ে রীতিমতো বোমা ফাটালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দাবি করেছেন, তার টুইটার বার্তা থেকেই ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের খবর পেয়েছেন স্বয়ং নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বুধবার এই তথ্য জানান তিনি। মোদি বলেন, নেপালে ভূমিকম্পের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা ওই ভূমিকম্পের সময় রাষ্ট্রীয় সফরে থাইল্যান্ডে ছিলেন। মোদি ভূমিকম্পের ঘটনায় টুইট করার পরই সুশীল এ সম্পর্কে জানতে পারেন। এ বিষয়টি সুশীলই নাকি তাকে ফোন করে জানিয়েছেন।