সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের আতঙ্কে হাজার হাজার কৃষক পরিবার
বোরর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মনে
কামাল হোসেন, তাহিরপুরঃ হাওড় অঞ্চল খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র বোর ফসলের উপর র্নিবরশীল হাজার হাজার কৃষক পরিবারের দিন কাটছে এখন অতঙ্কেও মধ্যে। বৈশাখের শুরু থেকেই আবহাওয়া পরির্বনতের কারনে এবং ঘনঘন বৃষ্টির ফলে ও বোরধান কাটার শ্রমিক(ভাগালো) সংঙ্কটের কারণের ফলে এ অঞ্চলের একমাত্র ভরসা বোরধান কাটা একদিখে যেমন বিলম্ভ হচ্ছে অন্যদিকে আবহাওয়া পরির্বতনের কারণে থেমেথেমে অব্যহত বৃষ্টির ফলে ইতিমধ্যেই পাহাড়ি ঢলে জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের গোলাবাড়ি সংলগ্ন নজরখালি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৩’শ হেক্টর বোর ফসল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে, ২৬ এপ্রিল রবিবার সকালে র্ধমপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারথাল প্রকল্পের শয়তানখালী নামক ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি ঢুকে পানিতে ৬টি হাওরের প্রায় ১ হাজার একর বোর ফসলি জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে, এদিকে একই দিনে অব্যহত বৃষ্টিার কারণে নদীর পানি বেড়ে গিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার মইয়ার হাওরের বড্ডর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করে, ফলে ওই হাওরের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরফসল ঝুকির মুখে পড়েরে। এদিকে থেমে থেমে ও অব্যহত বৃষ্টির কারনে জামালগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরের বৃষ্টির পানি জমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান পানির নিছে তলিয়ে যায়। যার ফলে সুনামগঞ্জের ১১ টি উপজেলায় বোরধানের বাম্পার ফলন হলেও নেই কৃষকের মনে হাসি। বরং বিরাজ করছে আতঙ্ক আর আতঙ্ক। জেলার কয়েকটি উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরে সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, বৈশাখের প্রাথম থেকে থেমে থেমে ও অব্যহত বৃষ্টির কারণে বৃষ্টির পানি জমে বেশ কয়েকটি হাওরে বৃষ্টির পানি জমে কৃষকদের অনেক কষ্টের ও স্বপ্নের পাক বোর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আবার অনেকে অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোডের দায়সারা ভাবে হাওরের বেড়িবাঁধ গুলো নামমাত্র শেষ করে সংশ্লিষ্টদের পকেট বারি করে আখের গোচানো কারণে হালকা পাহাড়ি ঢলেই বেশ কয়েকটি উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইতি পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে হাজার হাজার হেক্টর পাক বোর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, জোলার ১১ টি উপজেলার বড় ৩৬ টি হাওরসহ মোট ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে বোরধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন এ জেলায় বোরো ধানের সবুজ সমারোহ চলছে। এ জেলার যে দিকেই তাকানো যাই সেদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ এই সবুজ প্রান্তর মন কেঁেড় নেয় যে কোন মানুষের। গতকাল মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে হাওড় পাড়ের লোকজনের সাথে কথা বললে, তারা জানানÑএইসব হাওড়ের জমি থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মন বোরো ধান উৎপন্ন হয়। যা হাওড় পাড়ের জনগোষ্ঠির চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ সারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারা আরও বলেন, আমরা শুনেছি জেলার সবছেয়ে বড় হাওর শুধু শনির হাওড়ের ধান দিয়েই সারা বাংলাদেশের মানুষের ১ দিনের খোরাক হয়। কিন্তু গতবারের মত এবারও হাওড় পাড়ের কৃষকদের মধ্যে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল আতঙ্ক বিরাজ করছে। উল্লেখ্য- অতিতে বেশ কয়েক বছর পাউবো-র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের অনিয়ম ও দুর্নিতীর কারণে হাওড়ের সকল ফসল রক্ষার ভেড়িঁ বাঁধ অর্ধেক কাজ না করেই তারা তাদের আখের ঘুছিয়ে চলে গেলে। যার ফল হিসেবে পরপর কয়েক বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানির তোড়ে পাউবো-র আফর বাঁধ ভেঙ্গে এ জেলার অনেক হাওড়েরই কাঁচা ও আধাঁ পাঁকা ধান অথৈই পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছি । ফলে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর কৃষকদেরকে সহায়তা দেয়ার জন্য তাহিরপুরে মহাকৃষক সমাবেশে প্রধান মন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রী মোতেয়া চৌধুরী উপস্তিত হয়ে জনতার উদ্দেশ্যে তারা বলেন , এবার থেকে এ সরকার ক্ষমতায় যতদিন থাকবে ততদিন যথাসমযে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাধঁ র্নিমাণ করা হবে। কিন্তু এবারও কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো পরও কোন হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ দায়সার ভাবে শেষ করে চলে যায় পানি উন্নয়ন র্কমর্কতার। যার ফলে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল বা আগাম জোয়ার হলেই এ জেলারপ্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার বোরো ফসল অথৈই পানির নিচে তালিয়ে যাওয়ার আশংকা করছে স্থানীয় কৃষকরা। শনির হাওর পাড়ের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক ফকর উদ্দিন (৩২) জানান, শনির হাওড়ের আহম্মখকালী ও পুটিমারার বান্ধের অবস্থা খুব খারাপ। গত সপ্তাহ খানেক ধলে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীতে পানি বাড়ার ফলে হাওড়ের দিকে পানি চাপ দিচ্ছে। যে ভাবে পানি বাড়ছে আল্লাই জানে এবারও যদি হাওর ডুবে যায় তাইলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ ব্যপারে তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কারুজ্জামন কামরুল বলেন, বেসরকারি এনজিও সংস্থা সিএনআরএস তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের গোলাবাড়ি সংলগ্ন নজরখালি বেড়িবাঁধের র্দুবল কাজ করার কারণে বাঁধটি ভেঙ্গে ইতি মধ্যেই হাওরে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৩’শ হেক্টও জমির পাকা বোর ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আর বাকী হাওরের বেড়ি বাঁধের কাজ পানি উন্নয়ন বোডের দায়সারভাবে কোন রকমে শেষ করে আখের গোছিয়ে ছলে যায়। বাস্তবে তা ৪০ থেকে ৫০% এর বেশি কাজ হয়নি। যার ফলে আজ আমরা এর ফল পেলাম। আবহাওয়া পরির্বতনের কারণে বৈশাখের শুরু থেকেই অব্যহত বৃষ্টির ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে হাওঞ্চলের কৃষিকরা উজানের পাহাড়ি ঢলের আতঙ্কেও মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর তাহিরপুরে এসে বলে ছিলেন এবার থেকে যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাস এখন বেস্তে যেতে বসেছে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন এর উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুল হক বলেন, এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে বোরধানের আবাদ করা হয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এবং ধান কাটার শ্রমিক সংঙ্কটের ফলে বোরধান কাটা অনেকটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি এরকম দিনের আবহাওয়া ভাল থাকলে ১০/১২ দিনের মধ্যেই কৃষকরা হাওরের ধান কাটা শেষ করে ফেলবে। ইতি মধ্যে এখন পর্যন্ত হাওরের ৪৫ থেকে ৫০% বোর ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।