ঝিনাইদহে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর পরে ঢাকায় রেফাডের্র অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে একটি বেসরকারি কিনিকে ভুল চিকিৎসায় আহসান শেখ (৪২) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন তার স্বজনরা। গতকাল শনিবার রাতে শহরের হামদহ এলাকার প্রিন্স হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওই কিনিক ও কিনিক মালিকের বাড়ি এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছে নিহতের স্বজনরা। নিহত আহসান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের মৃত কফিল শেখের ছেলে। নিহতের ছোট ভাই ফজলু শেখ জানান, এক সপ্তাহ আগে প্রচ- পেট ব্যথার কারণে তার বড় ভাই আহসান প্রিন্স হাসপাতালে চিকিৎসক দেখান। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তার পেটের পিত্তথলিতে পাথর আছে জানিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার ভাইকে প্রিন্স হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদুর রহমান ফিরোজ তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। তবে শরীরে রক্তচাপ কম থাকার কারণে শনিবার রাত ১০টার দিকে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে কিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের জানান। নিহতের স্ত্রী রেকসোনা খাতুন জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার স্বামীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন ডা. জাহিদুর রহমান ফিরোজ। এর আগে শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করেন কবীর নামে একজন। রাত ৯টার দিকে চিকিৎসক ও কিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে জানান রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে বাঁচাতে হলে এখনই ঢাকায় গ্রীন রোডে একটি বড় হাসপাতালে নিতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর কিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ওই এ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই কিনিকে অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারেই তার স্বামী মারা গেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের স্ত্রী। নিহতের ভাই ফজলু শেখ আরও জানান, ঢাকায় নেওয়ার পথে সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারে পৌঁছালে তাদের সন্দেহ হয়। তার ভাই সত্যিই বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে? সন্দেহ থেকে গাড়ি থামিয়ে তারা স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। ওই চিকিৎসকরা দেখে জানান, আহসান শেখ মারা গেছেন। এর পরপরই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তারা লাশ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় যান। ফজলু শেখ অভিযোগ করেন, ভুলভাবে অস্ত্রোপচার করায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে মৃত্যুর দায় এড়াতে কিনিকে কর্তৃপক্ষ রোগী ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। এদিকে রোগী মৃত্যুর খবর পেয়ে চিকিৎসক ও কিনিক কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যান। রাত ১২টার দিকে নিহতের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে কিনিকে ভাংচুর চালায়। এ সময় কিনিকে থাকা রোগীরা আতঙ্কে মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত ১টার দিকে কিনিক মালিক ও কালীচরণপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের বাড়ি ও প্রাইভেট কারের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। তবে এ বিষয়ে চিকিৎসক ও কিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ জানান, ভুল চিকিৎসায় একটি কিনিকে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।