নানা অপকর্মের মূলহোতা জুবের ও ডালিমের শেল্টারদাতা ভূমিদস্যু শামসুদ্দিন

Dalim-and-Juberসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট শহর ও শহরতলীতে নানা কারণেই আলোচিত জুবের আহমদ ও ডালিম। তাদের শেল্টারদাতা সমাজসেবী লেবাসের ভূমিদস্যু শামসুদ্দিন। তাঁর প্রধান লাঠিয়াল শাহপরান এলাকার জুবের আহমদ। আর জুবেরের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে সন্ত্রাসী মুজিবুর রহমান ডালিমসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওই চক্রের কাজ হচ্ছে ভূমিদখল, মামলা, হামলা ও থানার দালালি। তাদের অর্থযোগানদাতা হচ্ছেন শামসুদ্দিন। মানুষকে হয়রানী করে ভূমিদখল করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে মানুষের কাছ থেকে অবৈধ টাকা আয় করাই যেন তাদের মূল পেশা।
২০১০ সালে শামসুদ্দিন, জুবের আহমদ ও মুজিবুর রহমান ডালিমসহ ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বত্বদখলীয় খাদিমপাড়া কল্লগ্রাম বাইপাস সড়কের সন্নিকটের ভূমি দখল করে নেয়। এরপরই অবৈধভাবে দখল প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিতে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ডালিম ও শামসুদ্দিনের সাথে শলাপরামর্শ করে জুবের আহমদ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে মাঠে নামে সিলেট মহানগর পুলিশ, র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব-৯), এনএসআই ও ডিজিএফআই। এসএমপির পক্ষে অভিযোগ তদন্ত করেন তৎকালীন সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ মঞ্জুর মোল্লা, র‌্যাব-৯’র পক্ষে এএসপি শাহিন আহমদ এবং এনএসআই ও ডিজিএফআই’র ২ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
তাঁরা তদন্ত পূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেন। ২০১০ সালে সরকারের উপর মহলে ওই চক্রের দেয়া অভিযোগ তদন্ত করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো সত্যতা পাননি। প্রতিবেদন তাঁরা উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর জুবের আহমদ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বাসায় আশ্রয় নেয়। পাশাপাশি মুজিবুর রহমানের পত্রিকার কাজ ও রিয়েল এস্টেট’র ব্যবসা থাকায় তাও দেখা শোনার দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্পাদক মুজিবুর রহমানের অজান্তে সিলেট শহরে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে জুবের। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ভূমিদখল, টাকা আত্মসাতসহ অপকর্মের খবর ছাপা হয় জুবেরের বিরুদ্ধে। একই সাথে জুবের মুজিবুর রহমানেরও প্রচুর টাকা আত্মসাত করে। এরপর ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে কর্মস্থল হতে বের করে দেন সম্পাদক মুজিবুর রহমান। এরপর সে খাদিমপাড়া এলাকার চিহিৃত ভূমিদস্যু খাদিমপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি খন্দকার কামরুজ্জামান আনোয়ার ওরফে মামা খন্দকারের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে যোগদান করে। পরবর্তীতে জুবের ও তাঁর বাহিনী একেরপর এক মিথ্যা জিডি, মামলা ও অভিযোগ দিতে থাকেন মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রমান করে জুবের, ডালিম ও শামসুদ্দিনের টার্গেটে পূর্ব থেকেই ছিলেন সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমান।খন্দকার আনোয়ার, শামসুদ্দিন, জুবের আহমদ ও মুজিবুর রহমান ডালিম একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র।
গত ১৬ এপ্রিল ধান কাটার অভিযোগে শাহপরান থানায় যে মিথ্যা মামলা দায়ের করে শামসুদ্দিন যে ভূমিটি নিজের বলে জাহির করতে চাচ্ছে অনুসন্ধানে জানা গেছে সেই ভূমিটির বাস্তবে কোনো অস্থিত্বই নেই। ১৯৭৪ সালে কয়েকজন ব্যক্তি ভূমিটি বন্দোবস্ত পান। শামসুদ্দিন বন্দবস্ত গ্রহীতাদের কাছ থেকে কৌশলে স্বল্পমূল্যে ভূমিটি ক্রয় করেন। বন্দবস্ত গ্রহীতা সর্তভঙ্গ করে ভূমিটি বিক্রয় করায় স্থানীয় ভূমিহীন কয়েকজন কৃষক জেলা প্রশাসক বরাবরে বন্দোবস্ত বাতিলের মামলা করা করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দীর্ঘ দিন শুনানী শেষে শামসুদ্দিনের ক্রয়কৃত ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেভিনিউ ডেপোর্টি কালেক্টর মো. ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত স্মারক নং-এসএ/১সি/১২২/৮৫/১৭৩(৪) নম্বরে জানান, অফিসের নতিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মৌজা বহর জেল নং-৭০ খতিয়ানে লিখিত এলএস কেইস (বন্দবস্ত মামলা ২৭৫/১৬৩৩, ২৭৪/১৮৩৪, ২৭১/১৮৩২, ২৭৩/১৮৩৫, ২৩৬/৯১৭ ) নম্বরে ব্যক্তিবর্গের নামে বরাদ্দকৃত ভূমি শর্ত লঙ্গন করায় ১৯৮৫ সালের ১২ মে তাদের বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। এবং বাতিলকৃত ভূমি পুনরায় ১৯৮৮ সালে ৬ জন ভূমিহীনকে দেড় একর করে বন্দবস্ত প্রদান করা হয়।
এদিকে শামসুদ্দিনের নামে ক্রয়কৃত বন্দোবস্তকৃত জমির সাথে মুজিবুর রহমানের জমির কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ শামসুদ্দিনের দাবিকৃত ভূমি ১৯৮৫ সালে সরকার বন্দোবস্ত বাতিল করে ৬ জন ভূমিহীন কৃষককে ১৯৮৮ সালে বন্দোবস্ত প্রধান করে। ওই ভূমিহীন কৃষককরা নির্বিবাদে উক্তভূমি ভোগদখলও করছেন। বর্তমান জরিপে ওই ভূমি তাদের নামেও রেকর্ডভূক্ত করে নেয়া হয়েছে। তাই বহর মৌজায় শামসুদ্দিনের নামে কোনো ভূমি নেই। এমন কি সহকারী কমিশনার ভূমি ও জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে শামসুদ্দিনের নামে বহর মৌজায় কোনো ভূমির রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তথাপি শামসুদ্দিন, জুবের ও ডালিম গংরা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের মালিকানা দেখিয়ে ২০১১ সালে এ ভূমি সম্পাদক মুজিবুর রহমানের কাছে বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। জুবের এবং ডালিম একটি সঙ্গবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। আর তাদের পৃষ্টপোষক হচ্ছে শামসুদ্দিন ও সহযোগীরা। সমাজ সেবার আড়ালে শামসুদ্দিন এসব অর্থ যোগান দিয়ে দুস্কৃতিকারীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম, ভূমিদখল, জালিয়াতি করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বর্গাচাষি দুদু মিয়া ওরফে কালাকে শামসুদ্দিন কল্পিত একটি ধান চুরির অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করান। বর্গাচাষি দুদু মিয়া এমাদুল আম্বিয়া নামের এক ব্যক্তির ভূমি চাষ করে তার ভাগের ধান পাহারা দিচ্ছিলেন। শামসুদ্দিন, জুবের, ডালিম সহযোগীদের প্ররোচনায় শাহপরান থানা পুলিশ অসহায় বর্গাচাষি দুদু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। একই সাথে গত ১৬ এপ্রিল শাহপরান থানা পুলিশ সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও শাহপরান থানা এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী আনসার মিয়াকে আসামি করে একটি কল্পিত মামলা রেকর্ড করে। যে জমি থেকে ধান কাটা হয় ওই জমির ধান এবং আটককৃত দুদু মিয়ার সাথে সম্পাদক মুজিবুর রহমানের কোনো সম্পর্ক নেই।
অপরদিকে আটক দুদু মিয়াকে আদালতে সোপর্দ করার সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরওয়ার্ডিং-এ উল্লেখ করেন, গত ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় ধান কাটার সময় আসামি দুদু মিয়াকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু বাদী শামসুদ্দিন তার দায়ের করা এজহারে ঘটনার সময় উল্লেখ করেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এছাড়া এজহারে যে ভূমির তফসিল উল্লেখ করা হয় তা বাইপাস সড়ক থেকে অনুমান অর্ধ কিলোমিটার পশ্চিমে। এজহারে বর্নিত তফসিলের ভূমিতে রাতে কাদামাটি পেরিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, বার্গাচাষি দুদু মিয়া তাঁর চাষকৃত ভূমি থেকে আটক হওয়ার ২ দিন আগে ধান কেটে বাইপাস সড়কের পাশে সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বত্বদখলীয় একটি পাকা ঘরের সামনে রেখে পাহারা দিচ্ছিলো। দুস্কৃতিকারীরা ওই ধান মুজিবুর রহমানের মনে করে একটি সাজানো উদ্ভট চুরির ঘটনার জন্ম দেয়। আর নিরীহ বর্গাচাষি দুদু মিয়াকে চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ এপ্রিল রাতে দুদু মিয়াকে আটক করে পুলিশ। পরদিন ১৬ এপ্রিল শাহপরান থানায় ১৪৩/১৪৭/৩৭৯ ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়। কিন্তু পুলিশের ফরওয়ার্ডিং-এ দুদু মিয়াকে ধান কাটার সময় হাতে নাতে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করলেও মামলার মামলার বাদি শামসুদ্দিনের এজহারে দুদু মিয়াকে আসামি করেননি। প্রসঙ্গত চলতি বছরের গত ১৮ মার্চ সন্ত্রাসী জুবের আহমদ গংদের বিরুদ্ধে শাহপরান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মূলত এই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতেই শাহপরান থানা পুলিশের ছত্রছায়ায় শামসুদ্দিন এই কল্পিত মামলাটি সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করেন।