চালক ছাড়া চলন্ত ট্রেন থামিয়ে শতাধিক যাত্রীর প্রান বাচালেন আনোয়ার

Rajbari_TT_Anowarসুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাজবাড়ী রেল স্টেশন থেকে ছয়টি বগি ও প্রায় একশ যাত্রী নিয়ে চালক ছাড়াই উল্টাপথে ২৬ কিলোমিটার চলে যাওয়া ট্রেনটি থামিয়ে নায়ক বনে গেছেন টিকেট কালেক্টর (টিটি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৬০)। তার ঝুঁকি ও সাহসিকতার কারণে চালক ছাড়া চলন্ত ট্রেনে থাকা যাত্রীরা প্রাণে রক্ষা পান। রোববার (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টায় রাজবাড়ী থেকে উল্টাপথে পাংশা পর্যন্ত চলে যাওয়া ট্রেনটি থামান রেলওয়ে পাকশি পশ্চিম জোনের বাণিজ্য বিভাগে রাজবাড়ীতে কর্মরত টিটি আনোয়ার হোসেন।
এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পেতে শুরু করেন তিনি। তার এ কৃতিত্বের বিষয়টি অল্পসময়েই শহরে চাউর হয়ে যায়। আনোয়ার হোসেন রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা (বেড়াডাঙ্গা ) এলাকার ২নং বেড়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত. নিয়ামত আলীর ছেলে। ৩৭ বছর একটানা দায়িত্বের পালন করে অবসর নেন তিনি। পরে আরো ২ বছর চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দেন।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপ হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে শতাধিক যাত্রীর প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছি আমি। এটিই আমার জীবনের বড় পাওয়া। দেশের কোটি টাকার সম্পদ ও রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি? এ কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
তিনি জানান, সকাল ৮টায় তার রাজবাড়ী টু ফরিদপুর আন্তঃনগর ট্রেন এক্সপ্রেস (৭৮৩) এ দায়িত্ব পালনে গাড়িতে উঠেন। সকাল ৭টা ৫৭ মিনিটে হঠাৎ ট্রেনিট বিপরীত রুটে (রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া) চলতে শুরু করে। রাজবাড়ী আউটার পয়েন্ট পার হবার পর তিনি বুঝতে পারেন ট্রেন ভুল পথে চলছে।
তিনি বলেন, ভাবছিলাম হয়ত লাইন পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু যখন আউটার সিগনাল পার হয়ে ট্রেন দ্রুতগতিতে চলতে থাকায় সন্দেহ হয়। থামানোর জন্য চালক বা গার্ডকে খুঁজে পাইনি। ঘটনাটি জানাজানি হলে যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। তখন শিকল টেনে বা ভ্যাকুয়াম (বাতাস) ছেড়ে দিয়ে থামানোর চেষ্টা করি। প্রথম ২ বগির ভ্যাকুয়াম খোলার পরও গতিরোধ হয়নি। এরপর তৃতীয় বগির পাওয়ার কার তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে ইট দিয়ে তালা ভেঙে ফেলি। পরে চতুর্থ ও পঞ্চম ও ষষ্ঠ বগির ভ্যাকুয়াম খুলে দিই। এতে পাংশা বাবুপাড়া ব্রিজের কাছে ট্রেনটি থেমে যায়। তিনি আরো বলেন, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে পেরেছি। এ জন্য শুকরিয়া আদায় করছি। পরে ট্রেনের যাত্রীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন।