গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতার স্বীকারোক্তি : মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ইমনকে হত্যা
মিজানুর রহমান ফজলু, ছাতক প্রতিনিধি: ছাতকে অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে স্কুল ছাত্র শিশু ইমন (৬) কে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত নোয়ারাই ইউনিয়নের জামায়াত সেক্রেটারী ও বাতিরকান্দি গ্রামের শাহ জালাল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ সুয়েবুর রহমান সুজন (৩২) কে ঘটনার ১৩দিন পর গ্রেফতার করা হয়। সে উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষণঝুলিয়া গ্রামের মখলিছ আলীর পুত্র। বুধবার সকালে কুমিল্লা পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ছাতক থানা পুলিশ। স্বীকারোক্তি মতে ঘাতক সুজনকে সাথে নিয়ে ছাতক থানা পুলিশ অপহৃত ইমনের মৃত দেহ উদ্ধারে বুধবার দিনভর গ্রামের দুটি খালসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যপক তল্লাশী চালায়। তল্লাশীতে ব্যর্থ হলেও বাতিরকান্দি মসজিদের পাশ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বিষের বোতল, ছুরি, রক্তাক্ত লুঙ্গির কিছু অংশ ও একটি টাওয়াল উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত দেহ উদ্ধারের জন্য দিনভর তল্লাশী চালিয়েও উদ্ধার সম্ভব হয়নি। সুজনের কাছ থেকে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন কোম্পানীর ১৯টি সীম উদ্ধার করা হয়। তল্লাশী অভিযান চলাকালে হত্যা কান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে ঘাতক সুজন। সে জানায় এ ঘটনার সাথে রফিক ও ফারুক নামের দু’ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। অপহরণের পর মুক্তিপণের দু’লক্ষ টাকা না পেয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ সময় শিশু ইমন পানির পিপাসায় কাতরাতে থাকলে তাকে বিষ মেশানো পানি পান করানো হয়। এ সময় বিষের জ্বালায় ছটফট ও বমি করতে থাকলে ধরা পড়ার আশংকায় ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। পরে ইমনের লাশ বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী খালে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয় বলে জানায় ঘাতক সুজন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাশ উদ্ধারে তল্লাশী অব্যাহত রয়েছে। গত ২৭মার্চ বিকেলে বাতিরকান্দি গ্রাম সংলগ্ন নিজ বাড়ি পার্শ্বে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক থেকে অপহৃত হয় স্কুল ছাত্র শিশু ইমন। সে উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর পুত্র ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানীর পরিচালিত লাফার্জ কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র। অপহরণের কিছুক্ষণ পর অপহরণের কথা স্বীকার করে অজ্ঞাত স্থান থেকে অপহরণকারিরা কালা মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১৬-৪৬৭৭৮১ নম্বারে কল দিয়ে ২লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কালা মিয়া বাতিরকান্দি গ্রামের বাসিন্ধা ও অপহৃত ইমনের আত্মীয়। মুক্তিপনের টাকা দোয়ারাবাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপহরণকারিরা মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল। এর পর থেকে অপহরণকারির মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। এদিকে পরিবার ও এলাকাবাসীর সন্দেহ ছিল বাতিরকান্দি গ্রামের শাহজালাল জামে মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনের দিকে। এ ঘটনার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। এতে সন্দেহের তীর তার দিকে আরো এগুতে থাকে। এক পর্যায়ে সেই ঘাতক ইমাম পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ ঘটনায় আবদুল বাহার, নুরুল আমীন, মাওলানা আবদুস সালামের পুত্র জাহেদ আহমদ, আবদুল ওয়াজিদের পুত্র ফারুক মিয়া, আবদুর রহমানের পুত্র রফিক মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুরুল আমীনকে ছেড়ে দেয়া হলে অন্যান্যদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার প্রধান ঘাতক ইমামের নাম উঠে আসে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই প্রধান ঘাতক ইমামকে সিলেট শহর থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। উদ্ধার করা রক্তমাখা টাওয়াল ও লুঙ্গিটি ইমামের বলে সূত্রে জানা গেছে। থানার এস আই আহমেদ সনজিদ মুর্শেদ জানিয়েছেন, ঘাতকের দেয়া তথ্য মতে বাতিরকান্দি জামে মসজিদ এলাকা থেকে রক্তমাখা টাওয়াল, লুঙ্গীর একটি অংশ, বিষের বোতল ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারে তল্লাশী অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।