রোশনারা-টিউলিপের জয়ের হিসেব এখনি শুরু

tulip_roshnaraসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ব্রিটেনের নির্বাচনে লেবার এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের জয়-পরাজয় আর নির্বাচনী বাজিমাত নিয়ে ব্রিটেন এখন সরগরম। কনজারভেটিভের পার্টনার দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটও চায়ের কাপ আর মিডিয়ায় আলোচনায় সামনের কাতারে। এই তিন দলের পিছু পিছু বেশ নাটকীয় বক্তব্য আর কৌশল বিশেষ করে ইমিগ্রেশন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের থাকার প্রশ্নে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে নাইজেল ফারাজও মাঠ গরম করে রেখেছেন। সম্প্রতি সেভেন-ওয়ে ছয়টি দলের নেতাদের নিয়ে টিভি বিতর্কে স্পষ্ঠতঃ কোন দলই এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ যেমন হয়েছে, সেই সাথে লেবার এবং কনজারভেরটিভ দল দুটি শক্তিশালী জনমত জরিপে বিপরীতমুখী ভাবে একেবারে কাছাকাছি অবস্থানে আছে। অবশ্য অন্যান্য আরো কিছু জনমত জরিপে দুই দলের মধ্যে ১ পয়েন্ট থেকে ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত ব্যবধানও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন দলই সুস্পষ্টভাবে সংখ্যাগরিষ্টভাবে জনমত প্রভাবিত করতে পারেনি। সার্বিক অর্থনীতি, ইমিগ্রেশন, হেলথ, শিক্ষা ইত্যাদি প্রশ্নে সুইং ভোটার শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যান- তার উপর নির্ভর করছে নির্বাচনী ফলাফল। গতবারের নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেট সুইং ভোটারদের আকর্ষন করতে পেরেছিলো। এবার নিক ক্লেগের জনপ্রিয়তায় ধবস নেমেছে। নিজের আসনেও পাস করে আসতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও বো-আসনের প্রার্থী সাবেক সাংসদ রোশনারা আলী ও শ্বেতাঙ্গ- অশ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত হ্যাম্পষ্টেড ও কিলবার্নের আসনের প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে মূলধারার রাজনীতি ও মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা, বাংলাদেশীদের মধ্যেতো আছেই। এই আলোচনা এখন ব্রিটিশ নীতি নির্ধারনী পর্যায়েও ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে- দুজনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন আর সামাজিক, রাজনৈতিক ও কমিউনিটির সাথে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে। ব্রিটেনের মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোর মধ্যে গার্ডিয়ান, টাইমস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডেইলি মেইল, এক্সপ্রেস, সান, মিরর- নির্বাচনকালীন সময়ে দুই দলের সমর্থনে প্রকাশ্যে দ্যুতিয়ালি ও সমর্থন নিয়ে সামনে এগিয়ে থাকে। চলে নানা আলাপ-আলোচনা, নিবন্ধ প্রকাশ আর দুই দলের নেতা ও নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। ব্রিটিশ রাজনীতি যারা পর্যবেক্ষণ করেন, তারা জানেন টাইমস, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সমর্থন নতুন কিছু নয় বা জনগণ এটাকে দোষের কিছুই দেখেননা। এই সব বৃহৎ পত্রিকার সমর্থন যে সব দলের দিকে বেশী থাকে, সেই দলের পাল্লা ভারী হয়, নির্বাচনী ফলাফলও সেই দলের দিকে যায়। ভোট ব্যাংকের বাইরে যে স্যুইং ভোট থাকে, সেই ভোট এই পত্রিকাগুলো তাদের দলের জন্য প্রভাবিত করতে পারে।
বেথনাল গ্রিন ও বো আসনে রোশনারা আলী গত নির্বাচনেও ৪৩% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। বিগত ইরাক ইস্যুতে শ্যাডো মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে রোশনারা যুগান্তকারি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বেথনাল গ্রিন-বো আসনের অগ্রিম নির্বাচনী ফলাফল সেটাই বলে দিচ্ছে। আর মূলধারার রাজনীতিতে বলাবলি এখন তুঙ্গে। লেবার দল যদি ক্ষমতায় যায় কিংবা স্কটিশ লেবার পার্টির সাথে ভোট ভাগাভাগি করে সরকার গঠণ করে- রোশনারা পেয়ে যাবেন কেবিনেটে সম্মানী পদ- যা তিনি ডিজার্ভও করেন। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করতে গিয়ে সাবেক লেবার নেতা নিক কিনক সেকথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন। এছাড়াও মিলিব্যান্ড যখন কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে আসেন, তখন রোশনারাকে শুধু সাথে নিয়ে আসেন তা নয়, বরং আগামীতে বাঙালি যে কেবিনেটে একটি পদ পেতে যাচ্ছেন, সেই আভাষ দিতেও ভুলেননি। সর্বশেষ জনমত জরিপ আর ব্রিটেনের প্রভাবশালী সকল মিডিয়ায় রোশনারা জয়- ধরে নিয়েই হিসেব নিকেশ কষা শুরু হয়ে গেছে।
এমন নির্বাচনী যোগ-বিয়োগ যখন রাজনৈতিক পন্ডিতদের টেবিলে, ঠিক তখনি হ্যাম্পষ্ট্যাড ও কিলবার্ন আসনের লেবারের আরো এক বাঙালি প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিকীকে খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর নাতনী পরিচয়ে সচিত্র এক বিশাল সাক্ষাতকার ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। একই ধরনের ফিচার ইতোমধ্যে করেছিলো গার্ডিয়ানও।টিউলিপ সিদ্দিকীর আসনে আগে যিনি এমিপি ছিলেন তিনি হলেন দুইবারের অস্কার বিজয়ী গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন।বিগত নির্বাচনে এই আসনে গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন ১৭,৩৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে খুব মার্জিন ভোট মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছিলেন কনজারভেটিভ প্রার্থীর চেয়ে। রোশনারার আসন যেভাবে লেবারের ভোট ব্যাংকের বলা যায় প্রায় স্থায়ী আসন, তেমনি টিউলিপের আসনও ভোট ব্যাংকের হিসেবে লেবারের আসন। তবে পার্থক্য হলো রোশনারার আসন সংখ্যাগরিষ্টতার অংকে এগিয়ে, আর টিউলিপের আসন সংখ্যাগরিষ্টতার হিসেবে নয় বরং মার্জিন ভোটের হিসেবে এগিয়ে এবং এই আসন আপ এন্ড ডাউন হয় দুই দলের মধ্যেই । এই আসনে লিবারেলেরও ভোট বেশ রয়েছে, কেননা বিগত নির্বাচনে লিবারেলের প্রার্থী ৮৪১ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন থেকে। অর্থাৎ সেই হিসেবে তিন দিক থেকেই প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ এই আসন। তবে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে টিউলিপ এখন পর্যন্ত এগিয়ে এবং মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকার সমর্থনও তার পেছনে। সেই হিসেবে মূলধারায় মার্জিন ভোটে লেবারের এই তরুন প্রার্থী যে এগিয়ে যেতে পারেন- সেই হিসেব কিন্তু এখনি কষা হচ্ছে জোরে- শোরে। (http://www.independent.co.uk/news/uk/politics/tulip-siddiq-the-north-london-labour-candidate-trying-to-improve-the-woeful-diversity-of-westminster-10157378.html)
সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাথে এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে টিউলিপ সিদ্দিকী নিজের আশা আখাংক্ষা এবং চাওয়া পাওয়া ও ভোটের হিসেব নিকেষ খুলাখুলি তুলে ধরেছেন। ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক সায়মন উসবর্ণ টিউলিপের সাক্ষাতকার যখন নেন, তখন টিউলিপ ব্যস্ত নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে। সায়মন সাক্ষাতকারের ফাঁকে ফাঁকে টিউলিপের পরিচিতিও এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, বিশ্বের একপ্রান্তে সব চাইতে ডেমোক্রেটিক এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে যিনি লেবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন, অপরদিকে সেই একই সিদ্দিক বিশ্বের অপর প্রান্তের ১৬কোটি জনগণের নেতা এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনার ছোট বোনের মেয়ে এই টিউলিপ সিদ্দিকী। একইসাথে নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এসাসিনেশনের কাহিনীও কিঞ্চিৎভাবে এমনভাবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, যা টিউলিপের ব্যক্তিত্ব, আবেগ, অনুভূতি আর রাজনৈতিক পরিমন্ডলে গমন- এক সুন্দর আবেগময়ী অথচ বাস্তবতার কষ্টিপাথরে কিলবার্ন-হ্যাম্পষ্ট্যাডের ভোটার মাত্রই যে বিবেচনা করবেন- সেটা এখন স্পষ্টই ফুটে উঠেছে। আর সেজন্যেই ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাথে সাক্ষাতকারে যথার্থই তিনি বলেছেন, আমি লেবার করি, কারণ ইট স্পোক টু মাই ভ্যালুস।
সর্বশেষ ইউগভ আর মরিস জনমত জরিপ টিউলিপ আর রোশনারার বিজয়ের চিহ্ন ভেসে উঠছে। দুজনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের শত কষ্টের মধ্যেও ঠোটের কোণে হাসির রেখাই আম-জনতার লেবারের ভোটারদের জয়ের কথাই বলে দেয়। দুজনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে বিগত ১২ সপ্তাহ দৌড়-ঝাপের মধ্য দিয়ে ভোটারদের মনে যে আস্থার বহিঃপ্রকাশ দেখেছি, আর জনমত জরিপে যে ফলাফল আসছে, নাটকীয় কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হলে ৭মের নির্বাচনে দুই বাঙালি ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন- আমাদের কমিউনিটির অনেকেই এখন সেভাবেই বলাবলি করছেন, যেমন করছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং গার্ডিয়ান।