কপোতাক্ষ নদে’র বুকে চলছে ধান চাষ !!
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: বৃটিশ আমলে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরসহ এ অঞ্চলের কলিকাতা ও ভারত বর্ষে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নদী পথ। কপোতাক্ষ ও ভৈরব নদী দিয়ে লঞ্চ ও নৌকা যোগে চলাচল করা হতো। সেই কপোতাক্ষ নদীতে এখন ধান চাষ করা হচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দেশীয় প্রজাতির মাছ। মহেশপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ভৈরব, কপোতাক্ষ, ইছামতি, বেতনা, কোদলাসহ প্রভৃতি নদী প্রবাহিত ছিল। এই সকল নদীগুলি অনেক ইতিহাস বহন করে। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ সব হারিয়ে গেছে। এক সময় ইংরেজ শাসক গোষ্ঠি ও জমিদারদের মোটর লঞ্চ নদী বক্ষে সিটি বাজিয়ে বা ভেপু বাজিয়ে মুখরিত করে করতো। অসংখ্য জলযান ও মাঝি মাল্লাদের কোলাহল ছিল এই নদী গুলিতে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নদী পথে ব্যবসা করতে আসতো ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চল থেকে ব্যবসায়রা এসে ২/৩ মাস অবস্থান করে মালামাল বিক্রি করে এখান থেকে ধান, চাল সহ চাহিদা মোতাবেক জিনিস পত্র নিয়ে চলে যেতো। উপজেলার প্রধান নদী এখন স্রোতহীন, পানি শূন্য। মানুষ এখন নিজেদের মতো করে নদী দখল করে ধান চাষ করছে। এলাকার প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা নদী দখল করে পুকুর খনন করেছে। ভারতের গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নদী নাম ধারন করে। এর শাখা নদী মাথাভাঙ্গা, গড়াই এবং গড়াই এর শাখা নদী ভৈরব বা কপোতাক্ষ। মহেশপুরের এস বি কে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, কপোতাক্ষের সেই যৌবন অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। এখন দখলদাররে ধান চাষ হয় নদীর বুকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিলেও কোন সুরাহা হয়নি।
সামন্তা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ নজির শেখ বলেন, ছোট কালে এই নদী দিয়ে কলকাতা গেছি। আর এখন এখানে একটা ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে পারে না। এলাকার মানুষ নদী দখল করে চাষাবাদ করে। একই গ্রামের কৃষক মানিক হোসেন বলেন, এই নদী থেকে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলতো। বাবা পাশাপশি চাষাবাদ করতো। বাবা মারা গেছে সেই সাথে নদীর সেই মাছও আর কপালে জোটে না। বড় বড় লোকেরা এখন নদীর মালিক। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে খেয়াল করা উচিত। এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, কপোতাক্ষ নদকে দখল মুক্ত করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব দখলদার রয়েছে তাদের নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অবিলম্বে এ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। ভরাট হওয়া নদীগুলি পূর্ণ খনন এবং অবৈধ বাঁধ ও পুকুর খনন বন্ধ করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করলে আবার পুরানো ইতিহাস রক্ষা করা সম্ভব। অপরদিকে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এলাকার সচেতন মহল সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।