আড়াই মণ ধানে এক কেজি ইলিশ !!
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ তিন মাসের ব্যবধানে দক্ষিণঞ্চলে মোটা ধানের বাজার দর আর এক দফা কমেছে। ৭২০ থেকে ৭৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা ধান এখন ৬০০-৬১০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে গ্রামের কৃষকরা। ধান বিক্রি করে তারা গোস্ত কেনার সমর্থ হারিয়ে ফিলেছে। এক মন ধানে দুই কেজি গোস্ত কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আর আড়াই মন ধান বিক্রি করে এক কেজি ইলিশ মিলছে। ঝিনাইদহ জেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে মোটা ধান বলতে স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা ও ইরি ধানের ক্রেতা নেই। কৃষক অনেকটা ব্যাপারীদের হাত পায়ে ধরে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা দরে ধান বিক্রি করছেন। দুই,তিন মাস আগেও এসব মোটা ধান ৭০০ টাকা মণ বিক্রি করা গেছে। এখন প্রতি মনে কমেছে ৮০ টাকা। এ জাতের মোটা চাল এখন ৯০০-৯৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন এখন ভারত থেকে বিনা শুল্কে প্রচুর চাল আসছে। এ জন্য চালকল মালিকদের চাল বিক্রি হচ্ছে না। তারা ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ জন্য ধানের বাজার পড়ে গেছে। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজারের কয়েক জন চাল ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে গত তিন মাসে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশী চালের চেয়ে ভারতীয় চালের দাম কেজিতে কমপক্ষে এক টাক কম। এ জন্য অধিকাংশ চালকল প্রায় বন্ধের পথে। মালিকদের গুদামে মজুদ আছে লাখ লাখ মণ চাল। তারা ব্যাংকের দেনা শোধ করতে পারছেন না। এ জন্য ধান কিনতেও পারছেন না। ফলে ধানের দাম কমে গেছে। বোরো মওসুমে লোকসান কাটাতে ধান এবং চাল ব্যবসায়ীরা আরো কম দামে ধান কেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে গুদামে মজুদ বেশি দামের ধানের সাথে সমন্বয় করে ব্যবসায়িক লাভ করতে হবে। এই জন্য ১০০০ টাকা মণ দরের ধানের সাথে ৬০০ টাকা মণ দরের ধান কিনে গড় করলে ধানের গড় দর পড়বে ৮০০ টাকা। এ জন্য বোরো মওসুমে ধানের দর আরো কমতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বোরো মৌসুমে ধানের দাম কমলে বিপর্যয়ে পড়বে কৃষক। কারণ তারা চলতি আবাদ মৌসুমে অধিক দরে সার এবং কীটনাশক কিনে জমিতে দিয়েছে। দেনার দায়ে তারা জর্জরিত। ব্র্যাক, আশা ও সৃজনীসহ একাধিক এনজিওর কাছ থেকে পালাক্রমে ঋন নিয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ধান চাষ করছে। তাই ধানের দাম কমে গেলে গ্রামে গ্রামে সামাজিক বিপর্যয় ঘটার আশংকা রয়েছে। এদিকে ধানের বাজার কমলেও মাছ গোশতের বাজার চড়া। ইলিশের বাজারে চলছে বৈশাখী আগুন। এক কেজি ইলিশের দাম ১৫০০-১২০০ টাকা। এককেজি গরুর গোশত ৩৩০-৩৫০ টাকা। ৬০০ টাকা করে দুই মণ ধান বিক্রি করে কৃষক কিনছেন এক কেজি ছোট ইলিশ। আর এক মণ ধান বিক্রি করে দুই কেজি গরুর গোশতও কিনতে পারছেন না।