সিলেটে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ব্র্যাকের কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের ‘মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব’ (মেজনিন) কর্মসূচির উদ্যোগে ০৮ মার্চ ২০১৫ সিলেট জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে সকাল ১০টায় বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি সিলেট জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিয়ে বা অপরিণত বয়সে বিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ একটি সমস্যা যা জেন্ডারসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বাল্যবিয়ের কারণে ছেলে- মেয়ে উভয় শিশুরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এবং এর পরিণতিতে শুধু শিশু, অল্পবয়সী নারী নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো পরিবার। বাল্যবিবাহের প্রথম শিকার হয় শিশু, দ্বিতীয় শিকার নারী এবং তৃতীয় শিকার সমাজ। তিনি আরো বলেন, সিলেটকে আমরা বাল্য বিবাহ মুক্ত করতে মিডিয়া, ডাক্তার, কাজী, ইমাম, শিক্ষক, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সহযোগীতা চান।
কর্মশালা বিশেষ অতিথি ছিলেন এ জেড এম নূরুল হক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মোস্তাফিজুর রহমান জেলা রেজিষ্টার সিলেট, আলআমীন ভুঁইয়া জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সিলেট, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী আহবায়ক যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক সিলেট, ইকবাল সিদ্দিকি সভাপতি সিলেট প্রেস কাব।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মেজনিন কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট কাজী শাহানা আক্তার ।
মুল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ভয়াবহ, যা সমগ্র পৃথিবীতে চতুর্থ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ‘ইমপ্রুভিং চিলড্রেনস লাইভস, ট্রান্সফরমিং দ্য ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দু’টিতেই কনের বিয়ের বয়স থাকে ১৮ বছর বা প্রাপ্তবয়সের নিচে। প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজনের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে যা প্রায় ১৮%। দেশের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ২৯% বর্তমানে বিবাহিত। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ গরিব পরিবারের মধ্যে বাল্যবিবাহ হয়, ধনীদের মধ্যে যা ৫৩ শতাংশ।
বাল্যবিয়ে নারীর স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে কিশোরীকে পরিপূর্ণতা আসার আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়, তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়। বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীদের শতকরা ২০ ভাগ ১৫ বছর বয়সের আগেই মা হয়। বাল্যবিয়ের কারণে শতকরা ৪৫ ভাগ কম ওজন শিশুর জন্ম দিচ্ছে। এই অপরিণত মায়েরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শতকরা ৫ জন মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন সচেতনতার মাধ্যমে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব। কর্মশালায় সরকারী কর্মকর্তা, কাজী, ইমাম, শিক্ষক, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, নারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি