সিলেট বিএনপিতে অনৈক্য : জাপায় দ্বন্দ্ব, ফাকা মাঠে আ’লীগ

Awamileague-bnp-japaসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটের রাজনীতির মাঠে অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মতো দাপুটে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন মাঠে প্রতিনিয়তই নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতে বিরাজ করছে অনৈক্য। আন্দোলনের মাঠে একসাথে মাঠ কাঁপানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই দলটির নেতাদের। অনৈক্যের কারণে বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মীরা আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন। এদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের পর দলটির দ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তাদের আন্দোলনের শক্তিমত্তা দেখে কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কপালে। বিএনপি টানা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে, এই বিশ্বাস ছিল না আওয়ামী লীগের নেতাদের। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বিএনপি আন্দোলনে নিজেদের শক্তি জানান দেয়।
তবে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা, পেট্রোলবোমার ছোবল- এসব কারণে বিএনপির আন্দোলনে জনসমর্থন কমতে থাকলে ফের নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মরিয়া হয়ে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে তারা সিলেটের রাজপথ কাঁপাতে থাকে। একের পর এক মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করে দলটির নেতাকর্মীরা ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। বর্তমানে ‘বিএনপির আন্দোলনে কিছুই হবে না’ এই ধারণা কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে। ফলে তারা রয়েছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
এদিকে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে সিলেট বিএনপি মনোবল বেশ চাঙ্গা থাকলেও বর্তমানে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা ঘিরে ধরেছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনৈক্য, বিভেদ দেখে ক্ষুব্দ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শীর্ষ নেতাদের অনৈক্যের কারণেই সিলেটে বিএনপি আন্দোলনের শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি।
গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ শুরু হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই নগরীজুড়ে মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে হরতাল ডাকার পর শুরুর দিকে তাদের পিকেটিংও ছিল নিয়মিত। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন সম্পূর্ণ লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে অন্তরাল থেকে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু আন্দোলন নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যে ফাঁরাক সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো গোচানো সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ই এপ্রিল কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশে জেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট নুরুল হক অনুপস্থিত থাকলে সর্বসম্মতিক্রমে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক দিলদার হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আজমল বক্ত সাদেকের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশ পরিচালিত হয়। সভাপতি সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষনার প্রাক্কালে অনুষ্ঠানে এসে যোগ দেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এডভোকেট নুরুল হক। এসময় তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করতে চাইলে শুরু হয় বিতর্ক। অবশেষে এডভোকেট নুরুল হককে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
অন্যদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিকে কেন্দ্র করে দলটির দ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা জাপার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও ৭১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এ কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন উছমান আলী। দায়িত্ব পাওয়ার পর গতক ১ মার্চ নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা নব্বইয়ের দশকে সিলেটে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন বলে জানান। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
জেলা জাপার কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন মেনে নিতে পারেননি জেলা জাপার কমিটিতে থাকা নেতারা। ৩ মার্চ তারা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশে মন্টু অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে ভুল তথ্য দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তারা এ কমিটি বাতিলের আহবান জানান। তাদের এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। মন্টুর সাথে জেলা জাপার সহ-সভাপতি আবদুশ শহীদ লস্কর বশিরকেও নোটিশ দেয়া হয়। এ নিয়ে জেলা জাপার অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকটভাবে বেরিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘সিলেট জাপাকে শক্তিশালী করতেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সিলেটে জাপার পুরনো রূপ তথা শক্তিশালী অবস্থান ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছি।