বালাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ : ধান কাটা শুরু
শাহ. মো. হেলাল, বালাগঞ্জঃ বালাগঞ্জে এবার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও ধান কাটতে শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলার সকল হাওরে বাতাসে দোলা দিচ্ছে সবুজ ধানের শিষ। জমিতে কাচা পাকা ধানের গন্ধ বিরাজ করছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বর্তমানে উপজেলার প্রায় সকল হাওরে দ্রুত ধান পাকতে শুরু করেছে। আগামী সাপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটার ধুম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সর্বত্র কৃষক কৃষাণীরা এখন তাদের ফসল তুলার চুড়ান্ত প্রস্তুতি সারতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। আবহাওয়া ও প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকলে দীর্ঘ কয়েক মাসের খরার পরও সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের ফলে সর্বত্র বাম্পার ফলন না হলেও ভাল ফলন হবে বলে আশাবাদী কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা। অবশ্য দীর্ঘ কয়েক মাসের খরার প্রভাবে ফসলের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলেও চলতি সাপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বালাগঞ্জের কৃষকদের মধ্যে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আগেভাগে পাকতে শুরু করা ধান কাটা ও মাড়াইসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তায় আছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের চুড়ান্ত তথ্য ও সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ২৯টি কৃষি ব্লকে ১৪হাজার ৯শ ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত বোরো জমির মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ৭শ ২০, উফশী ১৩হাজার ৭শ ৮০ এবং স্থানীয় জাতের ৪শ ৬০ হেক্টর।
১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে দেওয়ান বাজার ইউনিয়নে ১হাজার ৫শ ১৫ হেক্টর এবং সবচেয়ে কম হয়েছে বুরুঙ্গা ইউনিয়নে মাত্র ৬শ ৯৫ হেক্টর জমিতে। দেওয়ান বাজারে আবাদকৃত ফসলের মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ৪৫ হেক্টর, উফশী ১হাজার ৪শ ২০ ও স্থানীয় মাত্র ৫০ হেক্টর। বুরুঙ্গা ইউনিয়নে হাইব্রিড মাত্র ২৫ হেক্টর, উফশী ৬শ ৬০ ও স্থানীয় ১০ হেক্টর। অন্যান্য ইউনিয়নে আবাদকৃত জমির মধ্যে রয়েছে উমরপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৪৫ হেক্টর, উফশী ৯শ ১০, স্থানীয় ১০ হেক্টরসহ মোট ৯শ ৬৫ হেক্টর। সাদীপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫৫ হেক্টর, উফশী ৮শ ৮৫, স্থানীয় ২৫ হেক্টরসহ মোট ৯শ ৬৫ হেক্টর। পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৪০ হেক্টর, উফশী ৯শ ৪০, স্থানীয় ৪০ হেক্টরসহ মোট ১ হাজার ২০ হেক্টর। পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫০ হেক্টর, উফশী ৬শ ৭০, স্থানীয় ৩৫ হেক্টরসহ মোট ৭শ ৫৫ হেক্টর। বোয়ালজুড় ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫০ হেক্টর, উফশী ৭শ ৭৫, স্থানীয় ৩০ হেক্টরসহ মোট ৮শ ৫৫ হেক্টর। গোয়ালা বাজার ইউনিয়নে হাইব্রিড মাত্র ৬০ হেক্টর, উফশী ৯শ ৪০, স্থানীয় ৩৫ হেক্টরসহ মোট ১হাজার ৩৫ হেক্টর। তাজপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫৫ হেক্টর, উফশী ৭শ ৬০, স্থানীয় ৩৫ হেক্টরসহ মোট ৮শ ৫০ হেক্টর। দয়ামীর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৪৫ হেক্টর, উফশী ৮শ, স্থানীয় ৪০ হেক্টরসহ মোট ৯শ ১৫ হেক্টর। উছমানপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৭০ হেক্টর, উফশী ১হাজার ৩শ ৫০, স্থানীয় ৫০ হেক্টরসহ মোট ১হাজার ৪শ ৭০ হেক্টর। পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫০ হেক্টর, উফশী ১হাজার ৪শ, স্থানীয় ২০ হেক্টরসহ মোট ১হাজার ৪শ ৭০ হেক্টর। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৭৫ হেক্টর, উফশী ১হাজার ৫০, স্থানীয় ৩৫ হেক্টরসহ মোট ১হাজার ১শ ৬০ হেক্টর এবং পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৫৫ হেক্টর, উফশী ১হাজার ১শ ৯০, স্থানীয় ৪৫ হেক্টরসহ মোট ১হাজার ২শ ৯০ হেক্টর।
হাওয়রের পরিদর্শনকালে কৃষক আজমল আলী সকুল, আলিওর খান, সফুর আলী প্রমুখ জানান, দীর্ঘ খরার কারণে এ বছর অন্যান্য বছরের মত বাম্পার ফলন না হলেও ফসল ভাল হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা শেষ করতে পারলে এতেই কৃষকরা খুশি থাকবেন। তবে কয়েকদিনের টানা অতিবৃষ্টি নিয়ে কৃষকরা বেশ চিন্তায় আছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মো. হাসানুল কবির কামালী বলেন, অন্তত মৌসুমের শেষ সময়ে হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফসলে মাঠে অনেক উপকার হয়েছে। দীর্ঘ খরা শেষে বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের পরও অনেকাংশে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।