কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহাল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। একইসঙ্গে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন।
কামারুজ্জামানের রিভিউয়ের ওপর আজ সোমবার সকাল ৯টায় রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও এ এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী। রোববার কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করা হয়।
কামারুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিলের পক্ষে চারটি যুক্তি দেখান খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, সোহাগপুর গ্রামে হত্যার ঘটনায় তিন সাক্ষীর বক্তব্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ১১ নম্বর সাক্ষী হাসেনা বানু, ১২ নম্বর সাক্ষী হাফিজা বেওয়া ও ১৩ নম্বর সাক্ষী করফুলি বেওয়া। তাদের মধ্যে ১১ নম্বর সাক্ষী শোনা সাক্ষী। অপর দুইজন সাক্ষী নিজেদেরকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করলেও তারা জেরায় বলেছেন, স্বাধীনতার পরে তারা কামারুজ্জামানকে দেখেছেন। অর্থাৎ পরের দুইজন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী হলেও তাকে স্বাধীনতার পরে দেখেছেন। এ অবস্থায় এসব সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না।
দ্বিতীয় যুক্তিতে তিনি আদালতকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আসামিপক্ষে দুটি বই দাখিল করা হয়েছে। ওইসব বইয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষীর সাক্ষ্যও আছে। সেখানে কামারুজ্জামানের নাম নেই। কিন্তু আপনারা সেই দুই বই গ্রহণ করেননি। কারণ, ওই বইগুলো ২০১১ ও ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ এখানে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। কারণে বলেছেন, ওই অভিযোগের সাক্ষীদের তথ্য সরাসরি হয়নি। এই একই কারণে ৩নং অভিযোগে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা যায় না। এ দুটি শাস্তি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই আপনাদেও দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার যোগ্য।
এ ছাড়া শুনানিতে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ফরিদা আক্তারের লেখা নারী মুক্তিযোদ্ধা নামে একটি বই উপস্থাপন করা হয়। যে বইয়ে সোহাগপুরে হত্যার জন্য পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে।
আরেক যক্তিতে খন্দকার মাহবুব বলেন, বিশ্বে যুদ্ধাপরাধের সাতটি বিচার হয়েছে। এর মধ্যে নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিলো। অপর পাঁচটিতে নেই। এমনকি গোটা বিশ্ব মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমে আসছে। আমাদের দেশেও আপিল বিভাগ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।
গত ৫ মার্চ মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিস্ট শাখায় রিভিউ আবেদন দায়ের করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। লিখিত রিভিউ আবেদনে ৪৪ টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ চারজন বিচারপতির স্বাক্ষর শেষে সর্বমোট ৫৭৭ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্য আপিল বিভাগের পূণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন করেন কামারুজ্জামান।
গত বছরের ৩ নভেম্বর বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বিভক্ত রায় দিয়েছেন।
২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।