মা আমাকে নিয়ে যাও এরা আমাকে মেরে ফেলবে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মা আমাকে নিয়ে যাও, এরা আমাকে মেরে ফেলবে। এভাবে মোবাইল ফোনে আকুতি জানাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী নুসরাত জাহান পুস্পি (২৪)। গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে তার মা শাহনাজ বেগমকে মোবাইলে নূসরাত বলেন, আমাকে নিয়ে যাও, এরা আমাকে মেরে ফেলবে।
নুসরাত জাহান পুস্পির মা শাহনাজ বেগম বলেন, গত দুই বছর আগে সেনা কর্মকর্তা মেজর নাজির উদ্দিনের সঙ্গে তার বড় মেয়ে নুসরাতের বিয়ে হয়। তাদের নাজমুস সাদাত নামে ১৩ মাসের ছেলে রয়েছে। নুসরাত টাঙ্গাইলের কালিহাতী এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। আর তার স্বামী মেজর নাজির চট্টগ্রাম সেনানিবাসে থাকেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য নুসরাতের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে শ্বশুরপক্ষ। এ খবর শুনে তার বাবা, মাকে নিয়ে কালিহাতী গিয়ে নুসরাতকে ঢাকায় আনতে চান। এ সময় মেজর নাজির তাদেরকে বলেন, স্ট্যাম্পে সই দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লিখে দিতে হবে নুসরাত ভাল আছে। কিন্তু আনার সময় নাজির তাকে মারধর করে। বাধা দিতে গেলে নুসরাতের মা-বাবার গায়েও হাত তোলে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় আহত নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেনা কর্মকর্তা স্বামীর হাতে নির্যাতিত নুসরাত জাহান পুষ্পিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ঢাবির এমবিএর মেধাবী ছাত্রী নুসরাত। মঙ্গলবার রাত ১২টায় তার সঙ্গে দেখে করে উপাচার্য বিচারের আশ্বাস দেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় নুসরাত জাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। রাত ১২টার দিকে সেখানে তাকে দেখতে আসেন ঢাবি উপচার্য। এ সময় তিনি নুসরাতের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘নুসরাত জাহানের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার মুখে যা শুনেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তাকে বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীসহ আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি। সুস্থ হলে আমরা বিষয়টি দেখব।’ তিনি আরো বলেন, আমরা ছাত্রীদের শিক্ষা দিচ্ছি যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হওয়ার জন্য। এজন্য মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। নুসরাত জাহান পুস্পির পিতার নাম নূর ইসলাম। তারা রাজধানীর সেগুনবাগিচার ওয়েস্টার্ন টাওয়ারে তারা থাকেন।
নুসরাত জাহানের ছোট ভাই মুঈদ হাসান তড়িৎ জানান, বুধবার থানায় মামলা দায়ের করার জন্য থানায় যাওয়া হবে। থানা পুলিশ মামলা না নিলে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।