লম্পট ফুফার লালসার শিকারে ৭ মাসের অন্তঃস্বত্বা পিতৃমাতৃহীন অসহায় কিশোরী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘আজ থেকে আট মাস আগের কথা। বাড়িতে একা পেয়ে ফুফা আব্দুল কাদের আমার ওপর সুযোগ নেয়। এক সময় জোর করে। আমি নিরূপায়, অসহায়। বাবা মারা গেছে অনেক আগে। মা-ও চলে গেছে আমাকে একা করে। কাকে বলবো এ বিপদের কথা। নিরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছু করতে পারিনি। ফুফা সম্পত্তি আর টাকা পয়সার লোভ দেখায়।
এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভনও দেখিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে নিয়ে আসে মাছাবান্দায় ফুফুর নিজ বাড়িতে। ফুফু চোখের আড়াল হলেই ভয় দেখিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। দিনের পর দিন এভাবে চলেছে। ফুফা বলতো, মুখ খুলিস না, তোকে অবশ্যই বিয়ে করবো। আর যদি একথা কাউকে বলিস তাহলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।
আমি ভয়ে আতঙ্কে থাকতাম। কাউকে বলার সাহস পেতাম না। বাবা আর মার জন্য খুব কষ্ট হতো। তারা বেঁচে থাকলে ফুফা আমাকে নষ্ট করতে পারতো না। আপন ফুফা হয়ে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি তার কঠিন বিচার চাই।’
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথা বলতে গিয়ে হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরী। বিয়ের প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে গত আট মাস ধরে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন তারই আপন ফুফা।
লম্পট ওই ফুফা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মাছাবান্দা গ্রামের মৃত মজাহার আলীর ছেলে আব্দুল কাদের। তিনি তিন সন্তানের জনক।
এ ঘটনায় অবশেষে মঙ্গলবার নির্যাতিতা কিশোরী বাদী হয়ে ফুফার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফুফা আব্দুল কাদেরকে আটক করে। বুধবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, লম্পট ফুফা বিয়ের প্রলোভন আর ভয় দেখিয়ে কয়েক মাস ধরে বাবা মা হারা ভাতিজিকে ধর্ষণ করেছে। এতে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এতিম ভাতিজি। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এদিকে, ভাতিজির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে আব্দুল কাদের। এক পর্যায়ে কিশোরীর খালা ও নানার বাড়ির লোকজন বিষয়টি জেনে তাকে পরীক্ষার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মেয়েটি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী আরো জানায়, আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফুফা আমাকে নষ্ট করেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। আমি তার কঠিন বিচার চাই।
অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরের এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে ওই কাজ করেছি।’
এ ব্যাপারে চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে কুড়িগ্রাম জেল হাজাতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ফুফা-ভাতিজির অনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভাতিজির অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।