গন্তব্য : মোঃ শামীম মিয়া

অজানা অচেনা অচিন দেশে ছিলো একটা পাহাড়। পাহাড়ের এক পাশে ছিলো নাম বিহীন একটা নদী। পাহাড়ের আরেক পাশে ছিলো বন। বনে স্থায়ী ভাবে সেই-কাল থেকে বাস করছে, বহু জাতের জীবজন্তু। তাদের খাদ্যের কোন সমস্যা হতো না। তবে নিমনো শ্রেনীর জীবজন্তুদের বিভিন্ন সমস্যা হতো। যেমন খাদ্য, বাসস্থান, ইত্যাদি। আরো একটা সমস্যা হতো মাঝে মধ্যেই তা হলো তুষার হতো, আবার বনে মাঝে মধ্যেই বরফ দিয়ে বনের ওলি গলি বন্ধ হয়ে যেতো। তাই বনের জীবজন্তু গুলো কিছু খাদ্য মজুদ করে রাখতো। এবার তুষারে এবং বরফে বনের অনেক ক্ষতি হয় সব চাইতে বেশি ক্ষতি হয় এক হরিণ পরিবারের। তাদের পরিবারের হরিণ সংখ্যা ছিলো ছানা এবং হরিণ-হরিণীসহ সাত জন হরিণ। হরিণ বাবা-মা চিন্তায় পরে যায় কী করবে এখন। সিংহ, বাঘ এর গর্জন দুর থেকে তাদের কানে ভেসে আসে। মা হরিণী, বাবা হরিণকে বলে, তুমি কোন একটা ব্যবস্থা করো। নইলে আমার দুধের ছানা গুলো না খেয়ে মারা যাবে। বাবা হরিণ বললো, আমি তো বাহিড়ে যেতে পারছিনা বাঘ সিংহদের ভয়ে। ওরা যে ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা হরিণী বললো, আকাশের নিচে থাকলে তো আরো বিপদ। বাবা হরিণ, ভাবছে কী করা যায়। এমন সময় বাবা হরিণের কাছে ছুটে আসে হরিণ-হরিণী ছানা গুলো। হরিণ কে ছানা গুলো বললো, বাবা আমাদের ক্ষুধা রেগেছে আমাদের খেতে দাও আর পারছিনা বাবা ? হরিণ রেগে গিয়ে বললো, আমাকে খেয়ে ফেল তোরা, আমার মাথা, চোখ, কান খেয়ে ফেল। তোদের পেট দেখে না এই বরফে ভরা বনে ঘাস কই পাই? মা হরিণী বললো, ওরা শিশু ওদের তুমি এমন করে বলছো কেন ? ওরা কী এতো কিছু বোঝে ? বাবা হরিণ বললো, হরিণী তুমি দেখি মানুষের মতো কথা বলো। আমি ও মানুষের মতো কথা বলতে পারি, যখন অভাব এসে যায় তখন গাধার মতো কথা বলতে পারিনা। যাইহক এবার চলো কোন জায়গায় একটা গন্তব্য খুজি।
হরিণ-হরিণী এবার ছানা গুলোকে নিয়ে চললো, গন্তব্যের খোঁজে। পথেই দেখা হয় এক উট পাখির সাথে। উট পাখিকে হরিণ বললো, ও উট পাখি, বলো তো কোথায় একটু গন্তব্য খুজে পাই। তুমি সব সময় আকাশ দিয়ে চলা ফেরা করো। আমি জানি তুমি বলতে পারবে। উট পাখি বললো, হরিণ ভাই সামানে গেলেই পাবে, কারণ, জীবজন্তুদের আবাসিক এলাকা সেখানে যদি বুদ্ধি খেটে থাকতে পারো। হরিণ বললো, বুঝেছি তবে ? উট পাখি বললো, তবে আবার কী ? তুমি কী শোনোনী মানুষ নামে কিছু কাঠুরীয়া এবং শিকারীর মুখে বুদ্ধি থাকলে শশুড় বাড়িতে থাকা যায়। উটের মুখে এমন কথা শুনে হাঁসছে হরিণী। উট পাখি চলে যায়। হরিণ-হরিণী সামনের দিকে এগোতে থাকে। কিছুদুর যেতেই হরিণের চোখে পরে একটা গুহা+গন্তব্য ফাঁকা আছে। তবে হরিণীর চোখে পরে সিংহর পায়ের কিছু ছাপ। হরিণী বলে সর্বনাশ গো র্সবনাশ ? যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। দেখেছো সিংহর পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। হরিণ বললো, তুমি কোন চিন্তা করো না তো। আর হাটতে পারবো না। তুমি কী শোনেনী উট পাখি কী বলে গেলো, বুদ্ধি থাকলে শশুড় বাড়িতে থাকা যায়। মনো করো এইটা আমার শশুড় বাড়ি। হরিণী বললো, কী আজগবি কথা বলো, আমার বাবা-মার বাড়ি এইটা হতে যাবে কেন ? হরিণ বললো, হরিণী তোমার সাথে মজা করলাম। এবার শোনো আমি তোমাদের যা, যা করতে বলবো তাই করবে। আসলে হরিণী এখানে সিংহ থাকে। এই কথা শুনে হরিণী তার ছানা গুলোকে বুকে টেনে নেয় ভয়ে। হরিণ বললো, ভয় এবার আমরা পাবো না, ভয় পাবে সিংহ । হরিণী বললো কী ভাবে ? হরিণ বললো, তুমি আমাকে এতো প্রশ্ন করো কেন ? যখন সিংহ আসবে তখন বলবো। এখন গুহার আশে পাশে থাকা ঘাস গুলো ছানা সহ তুমি আমি খাই। সিংহ ঠিক সন্ধ্যার সময় আসবে। হরিনী বললো, ঠিক আছে তাই হবে।
ঠিক সন্ধ্যায়, সিংহ আসছে তার নিজ গন্তব্যে। এমন সময় হরিণ তার ছানা গুলোকে বললো, আমি যখন তোমাদের বলতে বলবো তখন তোমরা কাঁদবে আর বলবে বাবা আমরা সিংহ খাবো সিংহ খাবো, একজন আরেক জনকে বলবে,ভাই আমি সিংহর মাথা খাবো। একটু জোরে জোরে বলবে, তোমাদের কান্না যেন সিংহর কান পযন্ত যায়। ছানা গুলো বললো, ঠিক আছে বাবা তাই হবে। সিংহ প্রায় কাছে এসেছে, আড়াল থেকে দেখছে হরিণ, এবং বললো, শুরু করো কান্না। ছানা গুলো কাঁদছে আর বলছে বাবা বাবা আমরা সিংহ খাবো সিংহ খাবো একজন আরেকজন কে বলছে বাবা আমি সিংহর মাথা খাবো, আরেক জন বললো না না আমি খাবো সিংহর মাথা। এই কথা গুলো সিংহর কান পযন্ত যায়, এবং সিংহ থমকে দ্বারায় আর মনে মনে বলে সিংহ খাবে মানে এই কন্ঠ তো আমার গুহা থেকে আসচ্ছে। ও বাবা এইটা আবার কত বড় জানোয়ার বনের রাজা সিংহকে খেতে চায় সামান্য ছানা গুলো তাও আবার বলছে একে আপরকে আমি সিংহর মাথা খাবো। এদের বাবা মা না জানি কত কী খায়। না না বাবা এইখানে আর এক মুহুত নয়। গন্তব্য গেছে তো গেছেই আমার জীবণ আগে বাঁচাই । এই বলে সিংহ লেজ নাড়তে নাড়তে কুকুরের মত চলে যায় দুর কোথাও। আনন্দে নাঁচতে থাকে হরিণী সহ ছানা গুলো। এবার হরিণ বললো, হরিণীকে কী গো এবার বলো তো আমার বুদ্ধি কেমন, হরিণী বললো, সত্যি বলছি গো তোমার জব্বর বুদ্ধি। হরিণ বললো, দেখো হরিণী সিংহ বনে থাকবে তবে আর কোনদিন এই গন্তব্যের দিকে ভুলেও তাকাবে না।
সিংহ আর কোনদিন এই হারানো নিজ গন্তব্যের দিকে তাকায়নী। সেখানে হরিণ হরিণী ছানা গুলোকে নিয়ে সুখে বসবাস করতে লাগলো। তাদের আর সমস্যা হয় না।