ডাক্তারের অবহেলায় সাংবাদিকপুত্র সাফি’র আঙ্গুল কেটে ফেলা হলো

safi Son of Journalist baborসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারদের অবহেলায় ডান হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবরের ৮ বছরের শিশুপুত্র সাফির। বর্তমানে সে নগরীর মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি দরজার হেজবল্টে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন বাবরের ছেলে সাফি। ডানহাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ্ববর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক শিশু সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের ৫ তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর শিশু সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। এ সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ তার সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘ডাক্তার আমরা, না আপনি ?’
সাফির মার অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটারে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর মনোযোগী ছিলেন না। তারা একে অপরের সাথে ঠাট্রা মশকরা করছিলেন।
অপারেশনের পর সাফিকে হাসপাতালের ৫০৫ নং কেবিনে সাফিকে নেওয়ার পর ডা. জাবের বাসা কাছে থাকায় সাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের সমূদয় বিল পরিশোধ করে সাফিকে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যান তার পিতা সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর।
হাসপাতালের ছাড়পত্রে ৩ দিন পর ডেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বর্হি:বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর (২০ জানুয়ারি) হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. মহসিন শিশু সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারো ডা. মহসিনের কাছে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে ডা. মহসিন হাসপাতালের ৫ম তলায় ডা. কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডা. কাজী সেলিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডা. জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারো ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডা. জাবের।
সংবাদিক বদরুর রহমান বাবর ছেলেকে ভূল চিকিৎসায় আঙ্গুল নষ্ট করা হয়েছে বলে উত্তেজিত হয়ে উঠলে চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডা. জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজের করবেন বলেও জানান ডা. জাবের। এতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি। পরবর্তীতে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী কয়েকবার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় সাফির ক্ষতস্থান।
এক পর্যায়ে ক্ষতস্থানে পুজ জমলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ হাসপাতালের প্যাডে মেডিএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. আবদুল মান্নানের কাছে রেফার্ড করেন। ওই দিনই ডা. মান্নানের কাছে সাফিকে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্ষতস্থানে গ্যাংগ্রিন হওয়ায় ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলেন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শিশু সাফির স্বজনরা। খবর পেয়ে সিলেটে কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উইমেন্স হাসপাতালে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিকে শিশু সাফির আঙ্গুল যাতে রক্ষা করা যায় তার জন্য তাকে নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালেও হাতের আঙ্গুল কেটে ফেরার জন্য বলা হয়। এতে নিরাশ হয়ে সিলেট ফিরে সাফিকে ডা. আবদুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের ৪০৪ নং কক্ষে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে সিলেট টেলিভিশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকরামুল কবির জানান, সাফির আঙ্গুলের অবস্থা দেখে আমরা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. মোজাম্মেলের সাথে দেখা করেছি। কিন্তু আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি।
সাংবাদিক ও আইনজীবি মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন জানান, একমাত্র ডাক্তারদের অবহেলার কারণে সাফির অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাফির পরিবার কোনো ধরণের সহানুভূতি পর্যন্ত পায়নি।
শিশু সাফির পিতা সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর জানান, চিকিসায় খামখেয়ালি ও অবহেলার কারণে আমার ছেলের আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে। এটা যে কতো যন্ত্রনার তা সকল পিতামাতাই অনুভব করতে পারবেন। আর কারো সন্তান যেনো ডাক্তারের অবহেলায় এ ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে ডা. কাজী সেলিম বিষয়টি নিয়ে তার সাথে এগ্রিমেন্ট করার কথাও ফোনে জানান।