সৌদি গমনেচ্ছুকদের ওপর পুুলিশের লাঠিচার্জ : নিবন্ধন অনলাইনেও

Suth-Surma-Bank-Ahoto-pc-12-02-15সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ একটি ফর্ম সংগ্রহ করতে ব্যাংকে সকালে আসা। এসে দেখা যায় লাইনে রয়েছেন কয়েকশ মানুষ। অন্য কোনো শাখায় যাওয়ার কথা চিন্তা না করেই সোনালী ব্যাংক আম্বরখানা শাখার লাইনেই দাঁড়ালাম। ভেলা যখন ১২টা তখনও ফর্ম সংগ্রহ করার সুযোগ হয়নি আমার। কারণ আমার সামনে আরো অনেকেই আছেন। প্রচন্ড লেগেছে পেঠে; সামনের লোকটিকে বললাম ‘ভাই আমি হোটেলে যাচ্ছি; আমার জায়গা রাখবেন।’ কিছুক্ষণ পরে আসলাম এসে দেখি লোকটি নেই। এখনতো আর কার সামনে দাড়ানো যাবেনা, আর দাড়াতে হলে যেতে হবে সবার পিছনে, এই ভেবে ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে।’ কথাগুলো বলছিলেন জকিগঞ্জ উপজেলার বটরতল গ্রামের শিহাব আহমদ। সরকারি সুযোগ কাজে লাগাতে যেতে চাচ্ছেন সৌদিআরবে। কিন্তু নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করতে না পেরে যাওয়ার সময় তিনি এভাবেই তার অভিমত প্রকাশ করেন।
সরকারিভাবে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ ও ব্যাংক ড্রাফট জমা করতে সিলেট নগরীস্থ সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোতে গমনেচ্ছুকদের উপচেপড়া ভীড় ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারও। নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ ও ব্যাংক ড্রাফট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই সৌদি গমনেচ্ছুকরা ভীড় জমান সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোতে। এই ভীড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে। গমনেচ্ছুকদের ভীড় সামলাতে জিন্দাবাজারস্থ সোনালী ব্যাংক শাখায় লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, সরকারিভাবে সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুকদের জন্য নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করে ব্যাংক ড্রাফট শেষে জমা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমের শুরু থেকেই সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাস্থ সোনালী ব্যাংক শাখায় উপচেপড়া ভীড় জমে সৌদি গমনেচ্ছুকদের। এই ভীড় গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল।
দক্ষিণ সুরমা সোনালী ব্যাংক শাখায়ও পুলিশের লাটিচার্জ, আহত ৩ : সৌদি আরবে গমনইচ্ছুরা ব্যাংক ড্রাফট করতে আসলে তাদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এসময় কমপক্ষে আহত হয়েছেন ৩ জন। আহতরা হলেন ভার্থখলার মরহুম আকদ্দছ আলীর পুত্র দিনার আহমদ হৃদয়, শাহীন, আব্দুর রহিম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার ষ্টেশন রোড সোনালী ব্যাংক শাখায় এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যাংক ড্রাফট করতে আসা কয়েকজন জানান, মানুষজন শান্তিশৃঙ্খলায় লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংক ড্রাফট করছে কিন্তু টাকার বিনিময়ে পুলিশ সদস্যরা লাইন ছাড়া লোকদের ব্যাংকের ভেতরে ঢুকার সুযোগ করে দিচ্ছে। এনিয়ে কথা বলতে গেলে পুলিশ সদস্যরা নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে কয়েকজনকে আহত করে।
ফরম জমাদান করতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সৌদি গমনইচ্ছুদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গুনতে হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। আবার কেউ কেউ আসা মাত্র দেওয়া হচ্ছে গেইট পাস। অনেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাড়িয়েও পাচ্ছেন না এক কদম এগোবার সুযোগ। এর কারণ জানতে চাইলে অনেকেই একবাক্যে বলেছেন শৃঙ্খলায় দায়িত্বরত পুলিশের জটিল সব কাহিনী। ভার্থখলার বাসিন্দা দিনার আহমদ হৃদয় বলেন, ‘আমি সকাল ৬টা থেকে লাইনে দাড়ানো অবস্থায় ছিলাম। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লাইনে থেকেও একটু এগোতে পারিনি। বরং লাটিচার্জে আহত হয়েছি। দু’শ থেকে পাঁচ’শ টাকার বিনিময়ে পুলিশ অনেককে গেইটের ভিতরে ঢুকিয়ে ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে কিন্তু আমরা অসহায় বলে কি সারাদিন না খেয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে রোদে পুড়ে মরবো।’ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আবারো দেখা গেলো হৃদয়ের ভাষ্যনুযায়ী এমন কিছু দৃশ্য।
এব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা ফাড়ির পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা পয়সা নেয়ার কোন ব্যাপার নেই তবে ব্যাপক ভীড়ের জন্য আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
সৌদি আরব যেতে নিবন্ধন অনলাইনেও
নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে সৌদি আরব গমনেচ্ছুদের ভিড় ও হট্টগোলের পরিপ্রেক্ষিতে এতে আগ্রহীদের ধৈর্য ধরতে বলেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদেশ গমনেচ্ছুরা ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অনলাইনেও নিবন্ধন করতে পারবেন। বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিগণ অফিস চলাকালীন সৌদি আরবসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে গমনের জন্য বিএমইটির অধীনস্থ সকল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এছাড়াও আগ্রহীরা বিএমইটির ওয়েবসাইটের (www.bmet.gov.bd) মাধ্যমেও অনলাইন নিবন্ধন করতে পারবেন বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আরও বলা হয়, আগে যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার তা করার প্রয়োজন নেই। নিবন্ধন করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করতেও নিরুৎসাহিত করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
সাত বছর ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে বছরে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নেওয়ার চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। এরপর সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন করতে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে ভিড় করতে থাকেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা, যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি স্থানে হট্টগোলোর সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনেও ছিল বিদেশ গমনেচ্ছুদের উপড়ে পড়া ভিড়। তা সামলাতে ভবনের নিরাপত্তা রক্ষীদের হিমশিম খেতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বাক-বিতণ্ডাও হয়, যা পরবর্তীতে হট্টগোলে রূপ নেয়।