কারিগরি শিক্ষাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কারিগরি শিক্ষাই হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার। দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর মাধ্যমে দারিদ্য বিমোচন করতে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানোর কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার বাস্তÍবায়নে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সিলেটের হোটেল গার্ডেন ইন-এ অনুষ্ঠিত “কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে শিল্পকারখানার ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীণ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন “স্কিলস এন্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (STEP)” এর সহযোগিতায় সিলেট পলিটকনিক ইনস্টিটিউট এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, এম. পি.। স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচাল মোঃ ইমরান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আমিনুল হক ভূইয়া, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী মুফাদ আহমদ সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার বসু’র সভাপতিত্বে সেমিনারে মডারেশনের দায়িত্ব পালন করেন স্কিলস এন্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের কমিউনিকেশন এন্ড মোবিলাইজেশন কনসালটেন্ট মোঃ জিল্লুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষাখাতে ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। দারিদ্য বিমোচনে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যপক জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবকর্মীতে পরিণত করতে হলে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে না পারলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে দেশকে বের করে আনা সম্ভব হবে না।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষা দিতে পারলে এ লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব হবে না। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে হবে এবং সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করছে। সরকার গৃহীত কার্যক্রমের ফলে এরই মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার অনেক বেড়েছে। কারিগরি শিক্ষার বিস্তারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এরই মধ্যে সরকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশকিছু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বাকী উপজেলায় পর্যায়ক্রমে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।
বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান বলেন, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে কাজ শেখার পর্যাপ্ত সুযোগ রাখতে হবে। অন্যথায়, শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষার্থীরা চাকুরীর সুযোগ পাবে না। তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মকে বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে নিজেদেরকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি উপস্থিত শিল্পকারখানার মালিকদের কারিগরি শিক্ষার্থীদের ইণ্টার্নশীপের সুযোগ দেয়ার আহবান জানান।
শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আমিনুল হক ভূইয়া তার বক্তব্যে বলেন, দেশের উন্নয়নে সরল কোন রাস্তা নেই। চিন্তা চেতনার প্রয়োগ ঘটিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ অর্জন সম্ভব হলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতে কোন বাধা থাকবে না।
স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী মুফাদ আহমদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, কারিগরি শিক্ষার সিলেবাস শিল্পকারখানার চাহিদা উপযোগী হতে হবে। অন্যথায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষে শিল্পকারখানায় যোগদান করে শিল্পের উপযোগী কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে না।
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পকারখানার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দিনব্যাগী আয়োজিত এ সেমিনারে সরকারি ও বেসরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিলেট বিভাগের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক, শিল্পকারখানার মালিক/উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন।