মেলার বোঝা মাঠের ঘাড়ে! শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ

14নুরুল হক শিপুঃ একদিকে স্কলার্স হোম স্কুল এন্ড কলেজ। অন্যদিকে সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। মাঝখানে সদর উপজেলার শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ। বর্তমানে মাঠটি দেখলে কেউ আর খেলার মাঠ বলবেন বলে মনে হয়না। কারণ মাঠ আবর্জনার স্তুপে আর ছোট-বড় গর্তে। গত দেড় মাসের ওপরে ওই মাঠে চলেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলা শেষে আয়োজকরা মাঠটি পরিস্কার না করে মাঠে ফেলে গেছেন আবর্জনার স্তুপ। বিশাল ওই মাঠের এক পাশের ছোট্ট একটি জায়গায় ক্রিকেট খেলছে শাহী ঈদগাহ এলাকার কয়েকজন কিশোর। আর পুরো মাঠ জুড়ে রয়েছে ভাঙা ইট, ছেড়া কাপড়, পলিথিন, প্লাস্টিক, খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট, পুড়া ছাই। এসব অবর্জণা যেন পাল্টে দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠের পুরো ঐতিহ্য। মেলা শুরু হওয়ার আগে মাঠে স্টল করার সময় যে গর্ত করা হয়েছিল তাও ভরাট করা হয়নি। যার কারণে মাঠটিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের। এখন পর্যন্ত মাঠের আবর্জণা সরানো কিংবা মাঠ সংস্কারের উদ্যেগ নেননি মেলা সংশ্লিষ্ট আয়োজক কিংবা উপজেলা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে খেলার মাঠটির এমন চিত্র। গর্তের কারণে যেমন মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে খেলার পরিবেশ তেমনি আবর্জণার স্তুপ সৃষ্টির কারণে আশপাশ এলাকার পরিবেশও বিপর্যস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা মাঠটি সংস্কারের কোনো পক্রিয়া বা উদ্যেগও গ্রহণ করেননি।
জানা গেছে, গেল বছর ৩ ডিসেম্বর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই)। মেলার আয়োজক কমিটি মেলা পরিচালনা করার কথা ছিল ১ মাস। সেই হিসেবে মেলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি। কিন্তু তা না করে মেলার কার্যক্রম চালান ১ মাস ২১ দিন। ৩ জানুয়ারি মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ও মেলা শেষ করা হয় ২৪ জানুয়ারি।
মেলার আয়োজকদের সাথে এ ব্যাপারে আলাপকালে তারা বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে মেলার কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে মিনিষ্টি থেকে চিটির মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩ জানুয়ারি, আর হরতাল অবরোধ শুরু হয় ৫ জানুয়ারির পর থেকে। সেক্ষেত্রে মেলার সময় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ল কেন? এমন প্রশ্নে সঠিক কোনো উত্তর মিলেনি আয়োজকদের কাছ থেকে।
অবশ্য মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই) এর পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানান, প্রথমত মেলা জমে ওঠতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সিলেটের মানুষ মেলার প্রতি আকৃষ্ট হন। মানুষের চাহিদা মেলার প্রতি বেড়ে যায়, তাদের চাহিদা মেটাতে কয়েক দিন সময় মিনিষ্টি থেকে বাড়ানো হয়। মাঠে আবর্জণার স্তুপ সৃষ্টি হয়েছে? মাঠ পরিস্কার ও সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আবর্জনা পরিস্কারের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মাঠ সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, মাঠের কিছু সংস্কার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই) এর পক্ষ থেকে করানো হবে। বাকিটা করানোর জন্য আমরা উপজেলা কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়েছি। তারাও কাজ করাবেন।
চেম্বার পরিচালক শফিউল আলম নাদেলের বক্তব্যের সাথে মিল পাওয়া যায়নি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের বক্তব্যের। তিনি জানান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি মাঠ সংস্কারের জন্য উপজেলা কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি করেছেন। সংস্কারের টাকা তারা দিয়ে দেবেন। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করবো। তিনি বলেন, মাঠের আবর্জনা সরানোর উদ্যেগ নিয়েছেন মেলার আয়োজকরা। খুব শীঘ্রই তা সরানো হবে।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান জানান, মাঠ সংস্কারের ব্যাপারে উপজেলা কর্তৃপক্ষের সাথে মেলার আয়োজক কমিটির কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি বলেন, অবর্জনা সরানো ও মাঠ সংস্কার করাবেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিন আহমদ জানান, মাঠের অবর্জনা সরানোর জন্য কাজ শুরু হয়েছে। তবে হরতাল-অবরোধের জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর সদর উপজেলা খেলার মাঠে শুরু হয় আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা। মেলায় দেশী-বিদেশী ১৬০টি স্টল, ৪টি মেগা প্যাভিলিয়ান, ৪টি প্রিমিয়ার, ৩টি স্ট্রান্ডার্ড প্যাভিলিয়ান, ৩টি ফোরেন জোন ও ৪টি টেক্সটাইল জোন ছিল। এছাড়াও মেলায় রিয়েল এস্টেট, আই টি টেলিকম জোন, ট্যুারিজম সেন্টার ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প উদ্যোক্তা ও মহিলা উদ্যোক্তাদের রেয়াতি মূল্যে কিছু স্টল বরাদ্দ ছিল। সক কিছু মিলিয়ে সিলেটে আন্তর্জাতিক ওই বানিজ্য মেলা ছিল জমজমাট। কিন্তু মেলা শেষ হওয়ার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ সংস্কার ও মাঠের আবর্জণা এখনও সরানো হয়নি।