জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদে শিক্ষক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

Proshikkon Pic 28.01.2015জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত একদিনব্যাপী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা মঙ্গলবার জামেয়ার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। জামেয়ার পরিচালক হাফিয মাওলানা ফখরুযযামানের সভাপতিত্বে ও আবদুল কাদিরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দের সহকারী পরিচালক আল্লামা শায়খ আবদুল খালিক শাম্বালি। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন দারুল উলুম দেওবন্দের হাদিসশাস্ত্রের উচ্চতর গবেষক আল্লামা শায়খ আবদুল্লাহ মারুফি।

প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম; সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রফেসর, বিশিষ্ট শিশুবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শামিম খান; প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসাইন, জনাব আবদুল মুমিন প্রমুখ।
প্রশিক্ষকরা বলেন, শিক্ষকরা হলেন উন্নত সমাজ বিনির্মাণের দক্ষ কারিগর, আর শিক্ষার্থীরা হল জাতির ভবিষ্যৎ। শিক্ষককে উন্নত চরিত্রের অধিকারী ও সচেতন হতে হবে। তাদের প্রতিটি আচার-আচরণ অনুসরণীয় হতে হবে। কখনো মেজাজ গরম করা যাবে না। এতে ছাত্রদের ওপর প্রভাব পড়ে। তারা বলেন, বর্তমান যুগে ছাত্রদেরকে নিজের আদর-সোহাগ, সহানুভূতি ও ভালবাসার আঁচলে বেষ্টন করে শিক্ষাদান করতে হবে।
দারুল উলুম দেওবন্দের সহকারী পরিচালক আল্লামা শায়খ আবদুল খালিক শাম্বালি বলেন, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকরা গোটা উম্মতের কা-ারি। যারা এ পেশা অবলম্বন করেছেন, তারা খুবই সৌভাগ্যবান। শিক্ষকরা সঠিক পথে পরিচালিত হলে গোটা জাতি সঠিক পথে পরিচালিত হতে বাধ্য। তিনি বলেন, ছাত্রদেরকে নিজের সন্তান মনে করে শিক্ষা দিতে হবে। তাদের মেধা অনুসারে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। লেখাপড়ার প্রতিবন্ধক ও অনীহা সৃষ্টি করেÑএমন কোনো আচরণ তাদের সাথে করা যাবে না। বিশেষ করে বর্তমান যুগে বেত্রাঘাত হচ্ছে শিক্ষার প্রতি অনীহার অন্যতম কারণ। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেওবন্দে বেত্রাঘাত করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকবৃন্দকে বেত্রাঘাত পরিহারের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান যুগে শিক্ষক প্রশিক্ষণের খুবই প্রয়োজন। জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ এরকম একটি আয়োজন করেছে দেখে আমি খুবই আনন্দবোধ করছি। আশা করি এর দ্বারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন এক বিবর্তন সৃষ্টি হবে।
প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান যুগে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মৌলিক পরিকল্পনার খুবই অভাব। সে অভাব পূরণে আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে এবং কর্মমুখী শিক্ষা সম্প্রসারণের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান বজায় রেখে একনিষ্ঠভাবে শিক্ষাদান করতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীর মেধামূল্যায়ন ও সহকর্মীর সাথে সুন্দর আচরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ প্রশিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শামিম খান শিক্ষাদানের বেলায় শিশুনির্যাতনকে একটি অপরাধ আখ্যা দিয়ে বলেন, অন্যান্য দেশে বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশ একেবারে ব্যতিক্রম। সেখানে কয়েকদিন পর পর পত্রিকার পাতায় শিক্ষককর্তৃক শিশুনির্যাতনের খবর ছাপা হয়। একজন শিক্ষকের জন্য বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে একটি ধারণা চালু আছে, আমরা মনে করি বেশি বেশি শাসন ও কঠোরতা অবলম্বন করলে মনে হয় খুব উপকার হয়। ধারণাটি আদৌ ঠিক নয়। অতিরিক্ত শাসন শিক্ষার্থীর মনে ভয়-ভীতির সৃষ্টি করে। এজন্য শিক্ষার্থীদেরকে ভয়-ভীতি ও নির্যাতনের পথ পরিহার করতে হবে। তিরস্কার না করে পুরস্কৃত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের শাসন যেন হিতে-বিপরীত না হয়ে যায়। তিনি বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্বচ্ছ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ বিনোদন মেধা বিকাশে সহায়তা করে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, রানাপিং, দক্ষিণকাছ, শাহকরার, মাদরাসাতুল মদিনা, গোয়াসপুর, আল-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল জামেয়াসহ সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি