সিলেটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর খোলা চিটি

॥ হাসান আলী ॥

hasan ali usaলাল সবুজের বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পুন্যভুমি সিলেটের সম্মানীত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিলেটের এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর খোলা চিঠি।
সিলেটের জনপ্রতিনিধিবৃন্দ- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, পশ্চিমাদের ভালো দিকগুলো যদি আমরা গ্রহণ করি আর পশ্চিমারা যদি আমাদের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে তাহলে তাদের সাথে আমাদের ব্যাবধান অনেকটা কমে যাবে। হ্যাঁ আমিও কবির কথার সাথে একমত পোষন করে বলছি আমরা একটা স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতি। আমাদের রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ও সংস্কৃতির অফুরন্ত ভান্ডার। হাজারো সমস্যার মাঝে আমাদেরও রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। কিন্তু যে জিনিসটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমাদের জন্য আজো অধরা রয়ে গেছে তা হলো নাগরিক সেবার মান। দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুবাদে অনেক জিনিস আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তার মধ্যে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
পুন্যভুমি সিলেটের সম্মানীত অভিভাবকবৃন্দ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যাবস্থা মুলত ৩টি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে। (১) সিটি , (২) স্ট্রেইট ও (৩) ফেডারেল গভর্ণমেন্ট। তাদের শাসনভ্যাবস্থার যে জিনিসটি লক্ষনীয় তা হলো প্রতিটি ষ্টেপ কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট দায়বদ্ধ থাকলেও তারা নাগরিক সেবার মান নিশ্চিত করতে পৃথকভাবে প্রয়োজনীয় আইন তৈরী করতে পারে। যার ফলে প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবার জন্য তাদের প্রতিটি ষ্টেপ তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কোন নাগরিকের যে কোন সমস্যা শুনলেই তাদের সরকারী বাহিনীগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তা নিমিষেই সমাধান করে দেয়। আমরা বাংলাদেশের সন্তান বিধায় প্রবাসে বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিক সেবার উচ্চতর মান দেখে নিজেদের মন অনেকাংশে ছোট হয়ে যায়।
সিলেটের কোটি জনতার প্রতিনিধিবৃন্দ- ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমার প্রিয় জন্মভুমি লাল সবুজের বাংলাদেশ একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ কওে দাড়িঁয়ে আছে। সামান্য কিছুর জন্য কেন আমরা বিশ্বের নিকট নিজেদের মনের দিক থেকে ছোট করব। সারাদেশের কথা না হয় আপাতত বাদই দিলাম। কিন্তু আমার নিজের শহর সিলেটের কৃতিসন্তান আবুল মাল আব্দুল মুহিত হচ্ছেন বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী, সৈয়দ মহসিন আলী সাহেব আছেন সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ে আর এম.এ মান্নান সাহেব রয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে। আরিফুল হক চৌধুরী হয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (তিনি বর্তমানে কারান্তরিন থাকায় যিনিই ভারপ্রাপ্ত আছেন), সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে রয়েছেন প্রথিতযশা বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। সিলেটের এই সকল দায়িত্বশীল গুনীজনের নিকট একজন সিলেটি বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে আমার আকুল আবেদন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আজই আপনারা নাগরিক সেবার মান নিশ্চিত করতে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিন।
সম্মানীত আলোকিত ব্যাক্তিত্ববৃন্দ- এতে কোন সন্দেহ নেই আপনারা সত্যিই দেশ-জাতি ও সমাজকে আলোকিত করার মহান দায়িত্ব পালন করছেন। যার প্রমান জনগণ আপনাদেরকে তাদের মুল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি একজন সিলেটি বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে সিলেটের সম্মানীত জনপ্রতিনিধিদের নিকট কয়েকটি আবদার রাখছি। যদিও অনেকেই হয়তো এটাকে ছোট মুখে বড় কথা মনে করতে পারেন। তবুও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে দেওয়ার জন্য এই কাজ গুলো অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমাদেশ গুলোকে একটু অনুসরণ করে যদি আমাদের দেশের সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে একটি নাগরিক অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন এবং সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ড পর্যায়ে একটি করে তাৎক্ষনিক অভিযোগকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এমনই ভাবে সকল পৌরসভা, ইউনিয়ন অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের সবগুলো সেক্টরে এরক অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তাহলে জনগণ এর প্রকৃত সুফল পাবে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনগুরোকে যদি নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে স্থানীয় আইন প্রনয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয় তাহলে তারা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ভুমিকা পালনে সক্ষম হবেন বলে আমার বিশ্বাস। আর এই কাজ গুলো করা খুব একটা জটিল বিষয় নয়। এজন্য আমাদের সম্মানীত জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তাই দেশ ও জাতির কল্যানে নিজের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে আমার এই লেখা। আপনাদের মত গুনীজন ও অভিভাবকবৃন্দ যদি এর আলোকে একটু হলেও উদ্যোগ নেন তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সার্থক হবে। পরিশেষে আপনার ভালো থাকবেন এবং দেশ,জাতি ও সমাজের কল্যানে আরো বেশী ভুমিকার পালনের নিমিত্তে সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিদায় নিলাম।

বিনীত
লেখক
মো: হাসান আলী
চেয়ারম্যান: অর্গানাইজেশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকানস্ (যুক্তরাষ্ট্র)
সদস্য: ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল সেন্ট্রাল কমিটি ইউএসএ
ই-মেইল ও ফেইসবুক: [email protected]