সিলেট কারাগারে ১৮ দিনে বন্দী বেড়েছে ২০৭ জন
ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশি বন্দী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বছরের প্রথম দিনে বন্দী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪শ’ ৫৫ জন। ১৮ দিন পর গত রোববার এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬শ’ ৬২ জনে। ১৮ দিনের ব্যবধানে বন্দী সংখ্যা বেড়েছে ২০৭ জন। কারাগারের ২৫টি ওয়ার্ড ও ২৮টি সেলে এ সকল বন্দী কারাভোগ করছেন। কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুনের ও বেশি বন্দী রয়েছেন। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বছরের প্রথম দিন গত ১ জানুয়ারী সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪শ’ ৫৫ জন। এর মধ্যে হাজতী ছিলেন ১ হাজার ৭শ’ ২৮ জন ও ৭শ’ ২৭ জন ছিলেন কয়েদী। এরই মধ্যে ৫ জানুয়ারীকে সামনে রেখে অভিযানে নামে আইনশৃংখলা বাহিনী। ৫ জানুয়ারীতে এসে কারাগারে বন্দী সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫শ’ ৪৯ জন। মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে বন্দী সংখ্যা ৯৪ জন বেড়ে যায়। এদিন হাজতী ছিলেন ১ হাজার ৮শ’ ২০ জন ও কয়েদী ছিলেন ৭শ’ ২৯ জন। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও অবরোধ পালন করছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। অবরোধ চলাকালে এ পর্যন্ত কেবল সিলেটেই স্থানীয়ভাবে ২০ দলীয় জোট পৃথকভাবে ৪ দিন হরতাল পালন করে। এছাড়াও বাসে-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনা ও ঘটছে। অবরোধ চলাকালে সংঘটিত ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করে। নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালায়। গ্রেফতার করা হয় মহানগর বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। কারা সূত্র জানায়, অবরোধের ১৩তম দিনে গত ১৮ জানুয়ারী গত রোববার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬শ’ ৬২ জন। এর মধ্যে হাজতী ১ হাজার ৯শ’ ১০ জন ও ৭শ’ ৫২ জন হলেন কয়েদী। সে হিসেবে ১৮ দিনের ব্যবধানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ২শ’ ৭জন বন্দী বেড়েছে। এর মধ্যে হাজতী বেড়েছে ১শ’ ৮২ জন ও কয়েদী ২৫ জন। ১৮ জানুয়ারীর বন্দীদের মধ্যে ছিলেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৪ জন, জামায়াতুল মুজাহিদিন জেএমবি’র ৩ জন, হরকাতুল জিহাদ হুজি’র ২ জন, হিযবুত তাহরীরের ২ জন ও ৮ জন বিডিআর সদস্য। জানা গেছে, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৩টি হাজতী ওয়ার্ড, ৬ টি কয়েদী ওয়ার্ড, ৩টি মহিলা ওয়ার্ড, হাসপাতাল সাধারণ ওয়ার্ড ২টি ও ১টি টিভি ওয়ার্ড, সাধারণ সেল ১২টি, গ্যাংসেল ৯টি ও ৭ টি পাগল সেলে এসকল বন্দীরা কারাভোগ করছেন। তবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ডিভিশন প্রাপ্ত কোন বন্দী নেই। সূত্র জানায়, ১৭৮৯ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার প্রতিষ্ঠা হয়। এর ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ২শ’ ১০ জন। ২২৬ বছরের পুরনো এ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনের চেয়েও বেশি বন্দী কারাভোগ করছেন।
সূত্র জানায়, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি বন্দীর ফলে বন্দীদের নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া বন্দীদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে কারা বিধান অনুযায়ী। গত কয়েক দিনে যে সকল বন্দীরা এখানে এসেছেন তাদের জামিনও হচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রতিদিন বন্দী সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সিলেটের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলাম সিলেটের ডাককে বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে পেট্রোল বোমা দিয়ে যানবাহনে আগুন দেয়া হচ্ছে। যানবাহন ভাংচুর করা হচ্ছে। এগুলো গুরুতর অপরাধ। অপরাধী যদি আইনের আওতায় না আসে তাহলে সমাজে অপরাধতো বাড়বেই। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতেই রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলীরা আদালতে দায়িত্ব পালন করেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি বন্দী রয়েছেন। তবে বন্দী যতো বেশি থাকে না কেন আমাদের অসুবিধা হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও এখানে ৩৩শ’ বন্দী ছিলেন। কারাবিধি অনুযায়ী বন্দীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কারাবিধান অনুযায়ী বন্দীদেরকে রাখা হচ্ছে। (সিলেট এক্সপ্রেস)