অবরোধ চলবেই : খালেদা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবরোধ চলছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলেব বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খারেদা জিয়া। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন এ ঘোষণা দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে গত ৫ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ অবরোধ কমূসচি ঘোষণা করি। আমাদের কর্মসূচি চলছে। পরবতী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সারাদেশ অবরুদ্ধ করে ফেলে সরকার। আমি ৫ তারিখে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আমার কার্যালয়ের সামনে পুলিশ বেরিকেড সৃষ্টি করে।’
খালেদা বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত এক বছরে আমাদের ওপর কী অমানবিক আচরণ করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাই না। গত এক বছরে আমাদের ওপর কেমন নির্যাতন চালানো হয়েছে আপনারা তারা দেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছি, ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের প্রস্তাব তাৎক্ষণিক নাকচ করে দিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বহু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির মহাসমাবেশের অনুমতি না দিয়ে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে সরকার। এর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বেগম জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশি প্রহরার মধ্যে নারী, শিশু, ছাত্র-ছাত্রীদের বহনকরী যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হতাহত ও দগ্ধ করা হয়েছে। এসব পৈশাচিক বর্বরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও ২০ দল নিরীহ নিরপরাধ জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর আক্রমণ করা কিংবা তাদের পুড়িয়ে মারার নৃশংস অপতৎপরতায় বিশ্বাস করে না। মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না, কখনো করিনি। অতীতে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে ও লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং পুলিশ খুনের অপরাজনীতি আওয়ামী লীগই করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখনো তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও অত্যাচারের পথ প্রশস্ত করছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে গত ৫ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের কর্মসূচি চলছে। পরবতী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে।’
সরকার জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে- অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘সকল প্রতিকূলতার মধ্যে, নির্যাতন সয়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য বিএনপিসহ ২০ দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেশের চলমান সঙ্কট নিছক কোনো আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এটাকে রাজনৈতিক সঙ্কট দাবি করে এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গত ১৬ দিন ধরে আপনারা আমার এই অফিসের সামনে খোলা আকাশের নিচে তীব্র শীত, বৃষ্টি ও কুয়াশা উপেক্ষা করে রাস্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পেশাগত কর্তব্য পালন করেছেন। নানা কড়াকড়ি ও সেন্সরশিপ উপেক্ষা করে সকলকে দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। টিভি সেটের সামনে বসে কিংবা সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার জন্য উৎকণ্ঠিত দেশবাসীর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি বন্ধুরা, অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠন উদ্বেগ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাদের সকলকে ধন্যবাদ। আমাদের দল-জোটের নেতা-কর্মী সারা দেশে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন ধন্যবাদ তাদেরকেও।’
‘আপনারা জানেন, আমাকে এখানে অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই ক্ষমতাসীনরা সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল সকল যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। এরপর আমি গত ৫ তারিখে এই কার্যালয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করলে আমাদেরকে তালাবন্দি করে রাখা হয়। ট্রাক, জলকামান, সাঁজোয়া যান দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় আমাদের ওপর নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে ছোড়া হয়। এর বিষক্রিয়ায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কী অমানবিক আচরণ আমাদের ওপর করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমি বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাই না।’
অস্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে সরকার
সরকার আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে অস্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ধরে আমাদের এবং দেশবাসীর ন্যূনতম অধিকারগুলো কীভাবে হরণ করা হয়েছে। কীভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা চালানো হয়েছে। কেমন জঘন্য ও
উসকানিমূলক ভাষায় আমাদের ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে। তারপরেও আমরা বারবার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেছি। তারা আমাদের আহ্বান ও প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে অস্ত্রের ভাষায় সব দমিয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতাসহ সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করেছে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মিছিলের ওপর গুলি করেছে। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
বাধ্য হয়ে অবরোধ
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। কর্মসূচি চলছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ না দিতে ক্ষমতাসীনরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের মদতপুষ্ঠ সন্ত্রাসীরাও হামলা করছে। এর মধ্যে গুলিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।
যৌথবাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে
যৌথবাহিনী অভিযানের নামে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বোমাবাজদের গ্রেপ্তার না করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে। মহিলাসহ পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতীত নিরপেক্ষ ঐতিহ্য বহাল রেখে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা জানেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনো তালাবন্ধ। দলের নেতাকর্মীরা কেউ নিরাপদে বাসায় থাকতে পারেন না। হত্যার
উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের উপর গুলি হয়েছে। তার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবিহউদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। আমাদের দলের অফিস অনেক জায়গায় পোড়ানো হয়েছে। কাউকে ধরা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অনেক জায়গায় অস্ত্র, বোমা ও গুলিসহ ধরা পড়েছেন। তাদের সকলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা নয় রাজনৈতিক সঙ্কট
চলমান সঙ্কটকে রাজনৈতিক দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে যে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতি আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের চলমান সঙ্কট নিছক কোনো আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এটি রাজনৈতিক সঙ্কট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।