গোলাপগঞ্জ পল্লি বিদ্যুতের ডিজিএমের কান্ড ॥ প্রতিবন্ধীকে ২০ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গোলাপগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ কার্যালয়ে চোর সন্দেহে এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রায় ২০ ঘন্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যার সময় গোলাপগঞ্জ থানার একদল পুলিশ প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার করে। তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় পুলিশের জিম্মায় রাতে তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চোর সন্দেহে নির্যাতিত প্রতিবন্ধী হচ্ছেন, গোলাপগঞ্জের গোবারকুল গ্রামের আবদুল লতিফ (৪০)। ওই গ্রামসহ গোলাপগঞ্জ পৌর শহর এলাকায় লতিফ একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচিত। তাঁকে চোর সন্দেহে গোলাপগঞ্জ পল্লি বিদ্যুতের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মস্তফা কামালসহ কার্যালয়ের কর্মচারীরা বেধড়ক মারধর করেছেন বলে লতিফের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করলে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক নির্যাতিত ব্যক্তি একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলে নিশ্চিত করেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কী আর বলব, এক কথায় অমানবিক একটি কান্ড করলেন তাঁরা (পল্লি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ)। রাত ১০টার দিকে তাঁকে আটকে রাখা হয়। বিকেলে খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যা ছয়টায় লোকটিকে উদ্ধার করে। এক নাগাড়ে প্রায় ২০ ঘন্টা আটক অবস্থায় ছিলেন ওই লোকটি।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গোলাপগঞ্জ শহরের কদমতলীর নিকট পল্লি বিদ্যুতের কার্যালয়। রাত ১০টার দিকে কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢোকে পড়েন লতিফ। পল্লি বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তখন ‘চোর চোর…’ বলে লতিফের হাত ও পা বেধে একটি কক্ষের মধ্যে রাখেন। সকাল নয়টার দিকে পল্লি বিদ্যুতের ডিজিএম মস্তফা সেখানে গিয়ে লতিফকে মারধর করেন। তাঁর কাছ থেকে ‘চোর’ স্বীকারোক্তি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দফায় দফায় চলে নির্যাতন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে চোর ধরা পড়েছে এ খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোক সেখানে গিয়ে লতিফকে শনাক্ত করেন। কদমতলী এলাকার বাসিন্দা একজন জানান, লতিফ একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এ বিষয়টি জানানোর পরও ডিজিএম বিশ্বাস করছিলেন না। এক পর্যায়ে পুলিশকে জানালে পরে লতিফকে উদ্ধার করা হয়।
লতিফকে নির্যাতন করার অবস্থা পর্যবেক্ষনকারী এক পুলিশ জানান, লোকটি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সে সবই দেখাচ্ছিলেন। তাঁর দুই পা ও হাতে জখম পাওয়া গেছে। ইট দিয়ে পায়ে আঘাত করা হয় এ বিষয়টি লতিফ হাতে ইট নিয়ে দেখিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে পল্লি বিদ্যুতের ডিজিএমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কার্যালয়ের টেলিফোনে কল করলে ওপাশ থেকে কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘এটা আসলে ভুল হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা অনুতপ্ত। লোকটির চিকিৎসার দায়িত্বও আমরা নেব।’