নিজ স্ত্রীকে চুরির মামলায় ধরিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকেঃ প্রথম বিয়ের ২২ বছর অতিবাহিতের পর কোন সন্তানাদি না থাকায় নিকটাত্মীয় লাভলী (২০) নামের এক সুন্দরী তরুনীকে বিয়ে করেছিলেন কালিয়ারভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। কিন্তু ২ বছরের একটি কন্যা ও মাত্র ৯ মাসের আরো একটি পুত্র শিশুকে নিজের কাছে রেখে চুরির অভিযোগে গত সোমবার দিবাগত রাতে লাভলী নামের ওই স্ত্রীকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল। পুলিশ মামলা রেকর্ড করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে লাভলীকে কোর্টে পাঠিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জের সর্বত্র নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
চুরির মামলার বাদি ইউপি চেয়ারম্যান মামলায় উল্লেখ করেছেন,প্রথম বিয়ের ২২ বছর অতিবাহীতের পর তার কোন সন্তানাদি না হওয়ায় তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে নিজ গ্রাম মান্দারকান্দির হাজী লেদু মিয়ার কন্যা উক্ত লাভলী বেগমকে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর চেয়ারম্যান নজরুলের ঔরসে লাভলীর গর্ভে ২টি সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা তানহা (২) ও ৯ মাসের পুত্র সন্তান তানহুর ইসলাম। মামলার সুত্রমতে বিয়ের কিছুদিন পরই লাভলী নজরুলের প্রথম স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে খারাপ আচরন করতে থাকে। এ কারনে নজরুলের প্রথম স্ত্রী স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে পিত্রালয়ে এবং পরবর্তীতে নজরুলের প্রথম স্ত্রী বেগম বিবি (৪৫) ভাইয়ের মাধ্যমে লন্ডন যান। বর্তমানে বেগম বিবি উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউপি’র কই খাইগ্রামের পিত্রালয়ে বসবাস করছেন। চেয়ারম্যান মামলায় দাবি করেছেন তার প্রথম স্ত্রীর সাথে লন্ডন থাকাবস্থায় এবং বর্তমানে পিত্রালয়ে থাকাকালীন তার সাথে সার্বক্ষনিক ফোনে যোগাযোগ আছে। আর এ যোগাযোগের কারনে স্ত্রী লাভলী বেগম ক্ষীপ্ত হয়ে স্বামী,শাশুরীসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে বাজে ব্যাবহার করতেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে,গত ১১ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে সাত ঘটিকার সময় চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির সুযোগে তার স্ত্রী লাভলী বেগম তার ভাই,পিতা,মাতাকে খবর দিয়ে বাড়িতে আনে। তারা চেয়ারম্যান নজরুলের বাড়িতে রক্ষিত আলমীরা থেকে তার প্রথম স্ত্রীর ২৭ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার,মূল্যবান কাপড়সহ প্রায় ১১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মালামাল চুরি করে নেয়। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গত সোমবার দিবাগত রাতে থানায় এসে উল্লেখিত অভিযোগে স্ত্রী লাভলী বেগমসহ শশুর-শাশুরী ও স্ত্রীর বড় ভাইকে আসামী করে একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী দারোগা এস আই আব্দুল করিম সোমবার রাতেই লাভলীকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। পুলিশ গতকাল বিকেলে লাভলীকে কোর্টে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মামলার বিবরনই তার বক্তব্য বলে দাবি করেন। অপরদিকে লাভলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে চুরির অভিযোগটি ভিত্তিহীন বালে দাবি করেন তিনি। দুইটি শিশু সন্তানকে আটকে রেখে লাভলীকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি কন্নায় ভেঙে পড়েন। লাভলীর পারিবারিক সূত্র জানায়,ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়শই লাভলীর সাথে বাজে ব্যবহার এমনকি শারিরীকভাবে নির্যাতন করতেন। ২টি অবুঝ সন্তানেরদিকে চেয়ে লাভলী অত্যাচার মেনে নিয়েই চলছিলেন। লাভলীর পারিবারিক সূত্র আরো জানায় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল অজ্ঞাতকারনে তার স্ত্রী লাভলীর সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করে তার ভ’-সম্পত্তি নিজের ভাইয়ের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন। লাভলী ওই সম্পত্তির বিষয়ে ২টি সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার বিষয়টি স্বামীকে জানালে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব বাড়ে। অপরদিকে চেয়ারম্যান নজরুল তার লন্ডন ফেরত প্রথম স্ত্রীকে আবারো নিজ বাড়িতে তুলে আনতে চাইলে ২য় স্ত্রী লাভলীর সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২টি অবুঝ সন্তানকে আটকে রেখে নিজ স্ত্রীকে চুরির অভিযোগে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জের সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে।