বিশ্ব ইজতেমা শুরু ॥ জিকিরে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ তীর
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে সারা মুসলিম জাহানের ২য় বৃহত্তম মহাসম্মেলন ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্ব গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামিকাল রোববার দুপুরে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি হবে। ৪দিন বিরতির পর আগামি ১৬ জানুয়ারী থেকে ৩দিনব্যাপী ২য় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আরম্ভ হবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে গত বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আ’ম বয়ান শুরু হয়েছে। মাঠের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুরা হয়েছে। জুমার নামাজে শরীক হতে ভোর থেকেই টঙ্গীমূখী মুসল্লিদের স্্েরাত লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্ব ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার জুমার নামাজে বিশ্বের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জুমার নামাজে প্রায় ২০লাক্ষাধিক অংশগ্রহন করেছে বলে ধারনা করেছেন আয়োজকরা। তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরব্বী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৩৮টি দেশের প্রায় ৭হাজার বিদেশী মুসল্লি ইজতেমা মাঠে এসে শরীক হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে তাবলীগ জামায়াতের নিজস্ব বাস-মাক্রোবাসে করে ইজতেমা মাঠে আনা হচ্ছে। বাংলা, আরবি, র্উদ্দু, হিন্দী, মালয় সহ একাধিক ভাষায় ইজতেমায় বয়ান করা হয়। বর্তমানে লাখ লাখ মুসল্লির জিকির আশকারে মূখরিত টঙ্গীর তুরাগ তীর। আল্লাহু আকবার ধ্বনি জিকির আশকার ও এবাদতে মশগুল রয়েছে বিশ্ব ইজদেমায় আগত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
জুমার নামাজে শরীক হতে রাজধানী ও আশেপাশের জেলা থেকে ভোর থেকেই মুসল্লিরা আসতে শুরু করে। ইজতেমা মাঠের ভীতর জায়গা না পেয়ে জুমার নামাজে শরীক হন পূর্বে টঙ্গীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিলগেট পর্যন্ত। উত্তরে টঙ্গী-কামারপাড়া লিংক রোডে। দক্ষিণে উত্তরা-আশুলিয়া বাইপাস সড়কে। পশ্চিমে আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের প্রবেশমূখ পর্যন্ত। মুসল্লিদের সুবিধার্থে খুতবা দেয়া হয় এবং জামাত পড়ানো হয় উত্তরা ১০নং সেক্টর সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে দাড়িয়ে। জুমার নামাজের জামায়াতে ইমামতী করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ যোবায়ের আহমেদ। দুপুর ১টা ৩৪মিনিটে খুতবা শুরু করেন। জামায়াত আরম্ভ হয় ১টা ৪৩মিনিটে। জুম্মার জামায়াত শেষে টঙ্গীর এক বাসিন্দার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জুম্মার জামায়াত শেষ হলে টঙ্গী-উত্তরায় দেখাদেয় তীব্র যানজট।
আখেরী মোনাজাতে শরীক হবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, বিভিন্ন ইসলামী দেশের কূটনীতিকগন, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বিশ্ব ইজতেমার মূল মঞ্চের পাশে বিশেষ মঞ্চে বসে মোনাজাতে শরীক হবেন।
স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল জানান, প্রধানমন্ত্রী কোথায় বসে আখেরী মোনাজাতে শরীক হবেন এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গনভবনে বসেও মোনাজাতে শরীক হতে পারেন। তারপরও টঙ্গীর বাটা সু কোম্পানী ভবনের ছাদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ মঞ্চ স্থাপন করা হবে।
পুুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ইজতেমা মাঠে এসে আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে অনুরোধও করব না আবার আসতে নিরুৎসাহী করব না। তিনি আসতে চাইতে আমরা সেভাবেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। গার্মেন্টস শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তফা সরকার জানান, যদি সরকার বাধা না দেয় তাহলে দেশনেত্রী বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া টঙ্গীর এটলাস হোন্ডা কোম্পানী ভবনের ছাদে বিশেষ মঞ্চে বসে মোনাজাতে শরীক হবেন। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা কে করবেন তা শনিবার সিদ্ধান্ত হবে। তবে তাবলীগ জামায়াতের একটি সূত্রের ধারনা অনুযায়ী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরব্বী দিল্লীর মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম। রোববার জোহর নামাজের আযানের পূর্বেই আখেরী মোনাজাত আরম্ভ হবে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুসল্লির উপস্থিতি অনেক বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আখেরী মোনাজাতে প্রায় ৩০/৩৫লাখ মুসল্লি শরীক হবেন বলে ইজতেমা আয়োজক মুরব্বীগন আশা প্রকাশ করছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ জানান, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৭হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। মুসল্লিবেশে গোয়েন্দা সদস্যরা প্রতিটি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মূফতি মাহমুদ খান ফোকাস বাংলা নিউজকে জানান, র্যাবের এয়ার উইং বৃহস্পতিবার থেকেই ইজতেমা মাঠে হেলিকপ্টার দিয়ে রেকি শুরু করেছে। উত্তরা ১১নং সেক্টরের এক ব্যবসায়ী মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, তাবলীগ জামায়াতের নিজস্ব নিরাপত্তায় বিশেষ একটি জামায়াত কাজ করে তাদের বলা হয় জোরনেওয়ালী জামায়াত। জোরনেওয়ালী জামায়াতের ২হাজার সদস্য আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি তারাও বাশের লাঠি হাতে নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান জানান, এবছর নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন ইটের সলিং রাস্তা করায় মাঠের আশেপাশে ধূলাবালি উড়ছে তাই মুসল্লিদের একটু সমস্যা হচ্ছে। ময়লা আর্বজনা পরিস্কাওে আমাদেও বিশেষ টীম কাজ করছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, টঙ্গীতে যানজটমুক্ত রাখতে আমরা নিরলসভাবে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি। র্যাব ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে ভেজাল খাদ্য বিক্রেতা ও ভূয়া হারবাল ঔষধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান চলছে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৬৮জন মুসল্লিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। টঙ্গী মডেল থানা পুলিশ গত ৩দিনে মাঠের আশেপাশে অভিযান চালিয়ে ১৭জন ছিনতাইকরী ও পকেটমার আটক করেছে। টঙ্গী ও উত্তরায় ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে দোকান, হোটেল ও কাচাবাজার জন্য বিট ভাড়া দিয়ে কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এব্যাপারে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্ব ইজতেমায় কেন্দ্রীয় মঞ্চ থেকে বয়ান করেছেন দেশ-বিদেশের তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরব্বী মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মুরব্বী মাওলানা মোঃ ওমর, মাওলানা মোঃ এহসান, মাওলানা মোঃ সা’দ, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা মোঃ ইসমাঈল, মাওলানা মোঃ সাদ, মাওরানা আঃ মতিন, মাওলানা মোঃ যুবায়ের আহমদ, মাওলানা মোঃ তারেক প্রমূখ।
বিশ্ব ইজতেমায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী মুসল্লি এসেছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে। এছাড়া যে সব দেশের মুসল্লিরা মাঠে এসে হাজির হয়েছেন তারমধ্যে মালদ্বীপ, নেপাল ভূটান, চীন, জাপান, কুয়েত, কাতার, দুবাই, সৌদি আরব, ওমান, দক্ষিন আফ্রিকা, তুরস্ক, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জামার্নী, কোরিয়া, ইরান, ইরাক, ব্র“নাই, ইতালী উল্লেখযোগ্য।