আমরা আসলে বুঝে-শুনেই বিরোধীদলকে সহিংস পথে ঠেলে দিয়েছি
একটি কাল্পনিক টক্-শোঃ ২০১৫ এ বাংলাদেশ!
ইনামুল হাফিজ লতিফী
একটি টক্-শো এ বিরোধীদল এবং এবং শাসকদলের দুই সম্মানিত কেন্দ্রীয় নেতার মাঝে কথোপকথন হচ্ছে, মডারেটর সেখানে একজন নীরব-নিউট্রাল জন্তুর মতোন বসে আছেন প্রশ্ন ছুড়বার পর!
মডারেটরঃ তো খবরের মাধ্যমে দেশবাসী আজ জানলো, সারাদেশে ব্যাপক গোলাগোলি, মারামারি, বাস-গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। অন্যদিকে সারাদেশে দূরপাল্লার সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষ পড়েছে বিপাকে, দেশের সার্বিক অর্থক্ষেত্র গেছে থমকে। এ ব্যাপারে প্রথমে জানতে চাইছি সরকারদলীয় অমুক মন্ত্রণালয়ের তমুক মন্ত্রীর কাছে।
তমুক মন্ত্রীঃ জ্বী, আপনাকে ধন্যবাদ। তো ব্যাপারটা হলো, যদিও সারাদেশে বিরোধীদল ব্যাপক ভাংচুরসহ দেশের আইনশৃংখলার মারাত্নকভাবে অবনতি করবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আপনার একটি কথার সাথে একমত হতে পারলাম না যে দেশের অর্থক্ষেত্র থমকে গেছে, আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, আমরা আসলে বুঝে-শুনেই বিরোধীদলকে এই ব্যাপক ভাংচুরসহ সহিংস পথে ঠেলে দিয়েছি, কারণ এই ভাংচুরসহ সহিংসতার মধ্য দিয়ে পুরনো দোকান, বাস-গাড়ি, গ্লাস, প্রোপার্টি পুড়ে যাবে, ভাংচুর হবে ফলে সবাই নতুন জিনিস কিনতে বাধ্য হবে। তো মদ্দা কথা হলো, এতে করে ব্যাবসায়ীদের জিনিস বিক্রি হবে আগের তুলনায় বেশি অর্থ্যাৎ দেশের অর্থক্ষেত্র আগের তুলনায় আরও বেশি চাঙ্গা হবে, লেনদেন বাড়বে, দেশের জিডিপি বাড়বে, দেশ একদিন সোনার বাংলাদেশ হবে।
(বিরোধীদলের কেন্দ্রীয় নেতা বকুল চাঁন্দ কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু তাকে হাতের ইশারায় তমুক মন্ত্রী থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন)
আর আপনি বললেন যানবাহন চলাচল কমে যাওয়ায় সাধারণ-যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে। দেখুন আপনি এটাও ভুল বললেন সম্পূর্ণভাবে। এই যে আজ যানবাহন চলাচল বন্ধ রইলো, এতে করে জনগণ বিশেষভাবে উপকৃত হলো, আজকের নিউজ চ্যানেল খুলেন দেখবেন প্রতিদিনকার মতো পরিবহন দুর্ঘটনায় ১০০-১৫০ জন মানুষ মারা যায়নি। অন্যদিকে আপনাকে বুঝতে হবে যে আমরা আজ একইসাথে বাসমালিকদের অসম্ভব উপকার করেছি, কারণ একদিন বাস-ট্রাক কম চলা মানে ইঞ্জিন যে কন্টিনিয়াস্লি গরম হওয়া থেকে বেঁচে যাওয়া, এর মানে বাস-ট্রাক আরও বেশিদিন টিকে থাকা, ইঞ্জিন আরও বেশিদিন লাস্টিং করা- এই সহজ কথা আপনারা ধরতে পারলেন না। আমরা বরং বিরোধীদলকে আহবান করবো প্রতিমাসে এরকম যেন রুটিন করে ১০-১২ দিন অবরোধ দেয়, এতে করে বাইরে থেকে বাস-ট্রাক আনার খরচও কম পড়বে, দেশের অর্থ দেশে থাকবে।
(বিরোধীদলের নেতা বকুল চাঁন্দ আবারও কিছু একটা বলতে গিয়ে শুধু ‘অর্থপাচার বেড়ে গেছে’, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে’ ছাড়া আর কিছু বলতে পারলেন না, তমুক মন্ত্রী তোড়-ফোড় মেজাজ দেখিয়ে থামিয়ে দিলেন)
এবং হঠাৎ করেই ঐ প্রাইভেট চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেল, কেন হলো, কি জন্য হলো, কেউ জানে না। তবে একটা জিনিস সত্যি, যা হয় তা ভালর জন্যই হয়, ভাল ব্যাতীত কিছু নয়!
লেখকঃ ইনামুল হাফিজ লতিফী, শিক্ষানবিশ, অর্থনীতি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।