ফেব্রুয়ারিতেই মোদি-মমতার ঢাকা সফর!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিগগিরই আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক সফলতায় যোগ হতে পারে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। একই সঙ্গে এই সফলতা ক্ষমতাসীন দলটিকে রাজনীতির ময়দানেও শক্ত অবস্থান তৈরি করে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকা আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসবেন তিনি।
সোমবার বিকেলে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার জকি আহাদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন।
এর আগে গত নভেম্বরে সার্ক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মমতার ঢাকা সফরের বিষয়টি জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তখন তিনি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন।
এছাড়া গেলো মাসে ভারত সফরের সময়ও সেদেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির নৈশভোজে মমতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগে গত শাসনামলে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ে ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আশার আলো দেখা দিলেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তীব্র আপত্তিতে তা ঝুলে যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে দেশটির তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিলেও মমতার বাধায় বারবার থমকে গেছে এর অগ্রগতি।
তবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর অবস্থান পাল্টেছেন মমতা। গত ৪ ডিসেম্বর কোচবিহারের ডাকুরহাটে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানান তিনি।
এ অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে মমতার ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া এখনো নিশ্চিত না হলেও ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ ঢাকা সফর করতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে নয়াদিল্লি সফর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর এরপরই ফ্রেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। ফলে ছিটমহল বিনিময়ের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
ছিটমহল বিনিময়ের ব্যাপারে ইতিমধ্যে মোদি দলীয় সমর্থন আদায় এবং জনমত তৈরির জন্য প্রচারণার কাজ করেছেন।
গত ৩০ নভেম্বর আসামে গিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার লক্ষ্যেই ঢাকার সঙ্গে সীমান্তে ভূমি বিনিময় চুক্তি কার্যকর করবেন।
এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমা চুক্তি অনুমোদন করার পর এখন ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষেই এ ব্যাপারে সংবিধানের সংশোধনী আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। শীতকালীন অধিবেশনেই এ সংশোধনী আনার কথা রয়েছে।
এই সংবিধান সংশোধনীটি পাস করানো গেলেই ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমির বিনিময় করতে পারবে ভারত-বাংলাদেশ।
এর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মোট ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হবে। এর জন্য ভারতকে ১৭ হাজার একরের কিছু বেশি জমি বাংলাদেশকে দিতে হবে। আর ভারত পাবে সাত হাজার একরের একটু বেশি।
অপদখলীয় ভূমিগুলোও বিনিময় করা হবে। যার ফলে ভারত প্রায় ২ হাজার ৮০০ একর জমি পাবে আর বাংলাদেশকে দিতে হবে ২ হাজার ২৬০ একরের মতো জমি।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী এই বিনিময়ের কথা ছিল।
বাংলাদেশের সংসদ ওই চুক্তি অনুমোদন করে দিয়েছে বহু বছর আগে। কিন্তু ভারত বিগত চার দশকেও সেটি করে উঠতে পারেনি। এ চুক্তি করতে চাইলে ভারতকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।